শামীমা মিতু: হাইস্কুলে পডার সময় তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল ৮ মিনিটের ইউটিউব ভিডিও। বলা হয়েছিল তিনি `বিশ্বের কুৎসিৎ মেয়ে।` তিনি লিজি ভালসাকেজ। এখন তার বয়স ২৩ বছর। চেহারা দেখতে রীতিমতো ভয়ঙ্কর। ইউটিউবে সে ভিডিওটি প্রকাশ পেলে অনেকে তাকে বলেছিল, জীবন শেষ করে দিতে। কিন্তু সেইসব কিছু কানে না নিয়ে তখনই নিজের জীবনের চারটি লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিলেন লিজি। প্রথমত, একজন সুবক্তা হওয়া, দ্বিতীয়ত, নিজের লেখা বই প্রকাশ করা, তৃতীয়ত, স্নাতক হওয়া ও নিজের কেরিয়ার ও পরিবার তৈরি করা।
সেই থেকেই গত সাত বছরে ২০০-র বেশি ওয়ার্কশপে বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। কীভাবে অভিনবত্বকে স্বীকৃতি দিতে হয়, বাধা, বিঘ্ন পেরিয়ে কীভাবে জীবনকে গ্রহণ করতে হয়, ভালোবাসতে হয়, এই সাত বছর ধরে সেই বিষয়ের ওপরই বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন লিজি।
পরিবারের সাথে লিজি। এক অসাধারন পরিবার। মা বাবা ভাই বোণ সবাই তাকে সাপোর্ট করেছে। স্বপ্ন পুরনে সাহস জুগিয়েছে। পাশে থেকে বন্ধুর মতো। তার পরিবারের কারো মাঝেই এ রোগের লক্ষন নেই।
২৩ বছরের এই মার্কিন নারী এক বিরল রোগে আক্রান্ত। তার শরীরে নেই কোনো অ্যাডিপোজ টিস্যু। অ্যাডিপোজ টিস্যু না থাকার ফলে শরীরে তৈরি হয় না কোনও পেশি, সঞ্চিত হয় না শক্তি, বাড়ে না ওজনও। এই ২৩ বছর বয়সেও তার ওজন ৬০ পাউন্ড অর্থ্যাৎ ২৭ কেজি। সম্পূর্ণ মেদবিহীন শরীরের লিজির ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর অনেকে তাকে হাসির পাত্র বানিয়েছে। নাক কুচকেছে অনেকে। কিন্তু তার জন্য থেমে থাকেনি জীবনের স্বপ্নপূরণ।
এখন হল ভর্তি শ্রোতার সামনে বক্তৃতা দেন লিজি । এই বছরই প্রকাশিত হতে চলেছে তার তৃতীয় বই। শুধু তাই নয়। সান মার্কোজের টেক্সাস স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কমিউনিকেশন নিয়ে পড়াশোনা করছেন লিজি। সান মার্কোজেই নিজের প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে থাকেন তিনি। ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম বই ‘লিজি বিউটিফুল’। গত`বি বিউটিফুল, বি ইউ।
এ বছর তৃতীয় বই প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে লিজির। উইকের ডেইলি মেইলের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে লিজি বলেন,
“শুধু বাড়িতে বসে থাকা আর মানুষের মন্তব্য শুনতে আমি চাই না। আমি তাদের সামনে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে বলতে চাই, আমি লিজি। আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকানো বন্ধ করো। নতুন কিছু শেখো।”
জন্মের সময় চার সপ্তাহের প্রি-ম্যাচিওর ছিলেন লিজি। ওজন ছিল মাত্র ২ পাউন্ড, ১০ আউন্স। লিজির মা রিতা জানান, লিজি এতই ছোট ছিল যে তার জন্য পুতুলের জামা কিনতে হতো। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন লিজি কোনোদিনই হাঁটাচলা করতে পারবে না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মস্তিষ্ক ও অস্থির গঠন স্বাভাবিক ভাবেই হতে থাকে। শরীরে শক্তি সঞ্চিত না হওয়ার কারণে প্রতি ১৫-২০ মিনিটে খেতে হয় তাকে। ৪ বছর বয়স থেকেই ঝাপসা হয়ে যেতে থাকে। এই সেই চোখ সম্পূর্ণ অন্ধকার। অন্য চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে এসেছে। কিন্তু থেমে যায়নি লিজির জীবনী শক্তি।
একজন সুন্থ স্বাভাবিক মানুষ হয়েও আমরা এতোটা উদ্দিপনা, সাহস দেখাতে পারি না। আমাদের চেহারা কতটুকু সুন্দর এই চিন্তা করে মন খারাপ করে কাটিয়ে দেয়। সামান্য বাধাতেই খেই হারিয়ে ফেলি জীবনে কিছু হবে না বলে। এমন মানুষদের সামনে অনুকরনীয় হয়ে থাকবে দুঃসাহসি লিজি। স্যালুট এই অদম্য নারীকে।