সম্প্রীতিই ধর্মের সৌন্দর্য

সম্প্রীতিই ধর্মের সৌন্দর্য

সাফাত জামিল শুভ: আবহমানকাল থেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাঝে বসবাস করে আসছে বাংলাদেশের মানুষ। এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান একটি সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। রক্তের বন্ধন না থাকলেও একে অন্যের আপদ-বিপদে পাশে দাঁড়ানোর কৃষ্টি এখানকার মানুষের সহজাত। বিশ্বের অন্য কোথাও এমন সহমর্মিতা লক্ষ করা যায় না। সম্প্রীতির এমন নজির রয়েছে সারা দেশেই। সাম্প্রদায়িকতার নামে যারা বিশৃঙ্খলা করে তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ সা: বলেন, ‘যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, যারা সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে এবং সাম্প্রদায়িকতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের সমাজভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ)


“মোরা একই বৃন্তে দু’টি কুসুম, হিন্দু মুসলমান,মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।।”
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই গানটি বাঙালীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিচয় বহন করে। অন্যদিকে বহু শতাব্দী আগে চণ্ডীদাস বলে গিয়েছেন, “সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মূলমন্ত্র।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বলতে বোঝায় এমন এক সহবস্থান যেখানে সব ধর্মের মানুষ মিলে মিশে থাকে,যেখানে সব ধর্মের মানুষ সবাই সবার বন্ধু।
বন্ধুত্বের এই মহান সত্যকে ধারণ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপিত হয়েছে নরসিংদী জেলার মনোহরদী পৌরসভায়। এখানকার হিন্দু অধিবাসী রাখাল চন্দ্র মন্ডলের মৃত্যুর পর তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে বিনাদ্বিধায় এগিয়ে এসেছে এলাকার তরুণরা, যারা প্রায় সবাই মুসলিম। বাড়ি থেকে মৃতের লাশ শ্মশানে নেয়া পর্যন্ত সকল কাজেই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল তাদের। দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন অপ্রীতিকর বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা শোনা যায়, সেখানে এমন সম্প্রীতির ঘটনা আবহমান বাংলার সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়। এমন শিক্ষণীয় ঘটনায় সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে তারা। 
মানবসমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব অপরিসীম। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মানুষের মধ্যে ধৈর্য, সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ ঘটায়। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশ ও জাতি উন্নতির শিখরে আরোহণ করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত না করে কোনো জাতি উন্নতি করতে পারে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনুপস্থিতিতে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়।
একটি রাষ্ট্রে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ থাকতেই পারে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ধর্মনিষ্ঠার সাথে সাথে পারস্পরিক সদ্ভাব, উদারতা প্রতিষ্ঠা করে বসবাস করাই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের এই সম্প্রীতি অটুট থাকুক আজীবন।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.