স্বাধীনতার মাসে ‘এই সব স্বাধীনতা’ও চাই

স্বাধীনতার মাসে ‘এই সব স্বাধীনতা’ও চাই

সৈয়দ জাহিদ হাসান: খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জিতে এখন চলছে মার্চ মাস। মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই মাসের ২ তারিখে বাংলাদেশের পতাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলন করা হয়। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের নামে ঘুমন্ত বাঙালি জাতির উপর গণহত্যা চালায়। ২৬ মার্চ বাংলার মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। মার্চ বাঙালির কাছে একটি অন্য রকম আবেগ, আকাক্সক্ষার মাস। এই মাসে আমরা রক্ত দিয়েছি। আবার এই মাসেই রক্ত নেওয়ার দীপ্ত শপথে জ্বলে উঠেছি। মার্চ মাসে আমরা স্বাধীনতা চেয়েছি, তা পেয়েছিও। হয়তো এজন্য আমাদের তিরিশ লক্ষ স্বজনের জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে। সম্ভ্রম হারিয়েছে আড়াই  লক্ষ মা-বোন। ‘স্বাধীনতা’ এমন এক পবিত্র ও অমূল্য সম্পদ, যাকে পেতে মানুষ যেকোনো ত্যাগ স্বীকারেই প্রস্তুত।:

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আমরা পরাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা চেয়েছি। ২০১৯ সালের এই মাসে আমরা আরো কিছু স্বাধীনতা চাই। আমরা অপিস-আদালতে ঘুষ না দিয়ে কাজ করার স্বাধীনতা চাই। হাসপাতালে ডাক্তারকে অতিরিক্ত ফি না দিয়ে চিকিৎসা সেবা পাওয়ার স্বাধীনতা চাই। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবশ্রেণিতে বিনামূল্যে অধ্যয়নের স্বাধীনতা চাই। যেকোনো মুহূর্তে পুলিশ নামের আতঙ্ক থেকে স্বাধীনতা চাই।

বনদস্যুদের হাত থেকে বন, ভূমিদস্যুদের হাত থেকে ভূমি এবং জলদস্যুদের হাত থেকে জলসীমা রক্ষার স্বাধীনতা চাই। এমন কি আমরা গুম-খুন-ক্রসফায়ারের হাত থেকেও বাঁচার স্বাধীনতা চাই। চিরদিন জেনে এসেছি বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক-ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। আজ যেদিকে তাকাই সেদিকেই দেখি ধর্মীয় মৌলবাদীরা রক্ত পিপাসু দীর্ঘ জিহ্বা বের করে মানুষের রক্তপান করতে চাপাতি হাতে দিগি¦দিক ছুটছে। উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত থেকে ধর্ম রক্ষার স্বাধীনতা চাই। স্বাধীনতা চাইÑ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দালালির হাত থেকে। যারা নির্বিচারে ব্যাংক লুট করছে, শেয়ার মার্কেটের টাকা বিদেশে পাচার করছে, তাদের হাত থেকে ব্যাংক ও শেয়ার মার্কেট রক্ষার স্বাধীনতা চাই। সড়ক-মহাসড়কে নিরাপদ ভ্রমণের স্বাধীনতা চাই। কেজো লোক রাস্তায় বের হলে অকেজো সিগন্যালে ঘণ্টার পর ঘন্টা আটকে থাকে, আমরা যানজটহীন রাস্তায় চলাফেরার স্বাধীনতা চাই। আমরা নির্মল উৎসব পালনের স্বাধীনতা চাই। নির্বিঘেœ ভালোবাসার স্বাধীনতা চাই। মূর্খনেতাদের খামখেয়ালি পীড়ন থেকেও স্বাধীনতা চাই।

আজ বাংলার সর্বত্রই আবর্জনার স্তূপ দেখা যায়। রাস্তায় আবর্জনা, ফুটপাতে আবর্জনা, শিক্ষাঙ্গনের সামনেও পড়ে থাকে পরিবেশ বিনষ্টকারী আবর্জনা। আমরা আবর্জনার দুর্গন্ধ নয়, ফুলের সৌরভ উপভোগের স্বাধীনতা চাই। ডাস্টবিনে নয়, শিশুপালন কেন্দ্রে শিশুর বেড়ে ওঠার স্বাধীনতা চাই।

প্রতিদিনই কোনো-না-কোনোভাবে ব্যক্তি মানুষের স্বপ্ন বেহাত হয়ে যাচ্ছে। অন্ধকারে কেনাবেচা হচ্ছে আলোকিত মানুষের মগজ। আমরা স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার স্বাধীনতা চাই। মেধাপাচার নয়, মেধা সংরক্ষণের স্বাধীনতা চাই। আইন অমান্য সংস্কৃতি থেকে আইন মেনে চলার পরিবেশ ফিরে পেতে চাই। বাংলাদেশ, প্রিয় বাংলাদেশ, তুমি কি আমাদের স্বাধীনতার দাবিগুলো দয়ার্দ্র হৃদয়ে মঞ্জুর করবে? 

লেখক : কবি ও কথাশিল্পী

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Comments are closed.