কোলাহল – স্মৃতিময় কিছু মুহুর্ত

কোলাহল – স্মৃতিময় কিছু মুহুর্ত

দিনটি ছিল, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩  বৃহস্পতিবার । প্রতিদিনের মতো আমিও সেদিন  স্কুলে গিয়েছিলাম।


ও আপনাদেরকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম আমার নাম ঐশিক। আমি সবার খুব আদরের , ছোটবেলা থেকেই আমি আমার আব্বু, আম্মুর সাথে থাকতাম ,আমি যখন ক্লাস থ্রির ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করি ঠিক তখনি আমি রংপুরে চলে আসি ,এখানে আমি আমার নানু আর সয্য মানে আমার খালামনির সাথে থাকতাম, এখানে থেকেই  লেখাপড়া করি, ক্লাস ফোরে আমি নতুন স্কুলে ভর্তি হই , আমার স্কুলের নাম  Lions School And Collage,Rangpur . শুরুর দিকে নতুন স্কুল আর নতুন জায়গায় আমার মন না বসলেও পরে ধীরে ধীরে আমি এখানে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে ছিলাম। প্রতি দিন স্কুল , কোচিং আর বিকেলে খেলা সবটাই যেন একটা নিয়মের ভিতর দিয়ে চলছিলো , ধীরে ধীরে সময় এগিয়ে যেতে লাগলো , সময়টা যেন একটু তারাতারি চলে যায় ।


দিন যেতে লাগলো, মাস যেতে লাগলো এভাবেই একটা বছর চলে গেলো ফাইনাল পরীক্ষা চলে এলো , পরিক্ষা শেষ করে আমি আমার বাসায় চলে গেলাম আব্বু আম্মুর কাছে সেখানে আমার ছোট্ট ভাই আয়ান আছে , আমি ছুটি পেলেই সেখানে ছুটে যাই , আয়ানের প্রতি আমার অদ্ভুত রকমের একটা মায়া কাজ করে , ওর আধো আধো কথা আমাকে ওর কাছে খুব টানে । আমি প্রতি সময় ওকে খুব মিস করি । তবে এবার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে লম্বা সময় ধরে আমি আমাদের বাসায় ছিলাম , সময় খুব ভালোই যাচ্ছিল । হঠাৎ ছুটির দিন ঘনিয়ে আসছিলো আমার মনের ভিতর কেমন যেন একটা করছিলো এতোদিন সবার সাথে খেলাধুলা করে আয়ানের সাথে গল্প করে ভালোই যাচ্ছিল ,মনে হচ্ছিলো আমি মুক্ত পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছি যেখানে কোন ধরা বাঁধা নিয়ম নেই তবে দিন গুলো কিভাবে যে ফুরিয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না , ছুটির সময় শেষ বুঝতে পারলাম আমাকে রংপুরে চলে যেতে হবে , মন খুব খারাপ লাগছে সবার জন্য, কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছিলো না ।

বিশেষ করে আয়ান কে ছেড়ে । কিভাবে আমি ওকে ছেড়ে থাকবো বুঝতে পারছিলাম না । তবে কোন উপায় নেই যেতেই হবে , সেদিন আমি রংপুর চলে আসলাম স্কুলে এসে নতুন শ্রেণীর বই নিলাম ,এখন আমি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি , বরাবরই নতুন বইয়ের গন্ধ আমার খুব ভালো লাগে,  বই পেয়ে আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম । হয়তো তা বলে প্রকাশ করা যাবে না । তার পরের দিন থেকে আবার শুরু হয় নিয়মের মধ্যে চলা , আমাদের ক্লাস  শুরু হয় ঠিক নয় টায়।

প্রতি বৃহপতিরার ক্লাস শেষ করে আমি নিজ বাড়িতে যাই। যেহেতু শনিবার সরকারি ছুটি তাই আমি আবার রবিবার সকালে  চলে আসি । প্রতিদিনের মতো সেদিন আমি স্কুলে গিয়ে সব ক্লাস করলাম তারপর হঠাৎ শুনতে  পেলাম রবিবার স্কুলে পুজোর ছুটির কারণে স্কুল বন্ধ থাকবে । ক্লাস শেষ করে মনের আনন্দে আমি বাসায় আসলাম। এসে দেখি আমার  নানু প্রতিদিনের মতো তিন তলায় জানালার পাশে বসে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সাথে সাথে নানু দরজা খুলে দিলো । আমি স্কুল ব্যাগ  রেখে গোসল করে এসে দেখি নানু আমার জন্য  টেবিলে খাবার  দিয়ে দিছে। খাবার শেষ করে আমি রেডি  হয়ে বের হলাম বাড়ির উদ্দেশে। আজকে আয়ানের কথা খুব মনে পড়ছে তাই বাসায় যাওয়ার সময় আমি রাস্তায় ওর জন্য কিছু চকলেট কিনে নিয়েছিলাম ।

বাসায় এসেই আমি ব্যাগ রেখে ফ্রেস হয়ে আয়ান কে কোলে নিলাম ওকে ওর জন্য আনা চকলেট দিলাম , ও অল্প তেই অনেক খুশি হয়ে যায় , চকলেট দিতেই ও আমার গলা জড়িয়ে ধরলো আর আমার সাথে অনেক গল্প করলো ।


পড়াশুনা, খেলাধুলা , আব্বু  আম্মু আর আয়ানের সাথে খুনসুটি করতে করতে কখন যে ছুটির সময় ফুরিয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না । মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো,  পরদিন সকালে আমি রেডি হয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম আজ কেন জানি যেতে ইচ্ছে করছে না বারবার আমি পিছনে ফিরে আব্বু,আম্মু আর আয়ান কে দেখ ছিলাম কিন্তু কি আর করার যেহেতু যেতেই হবে তাই আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম আমি জানি নানু আমার জন্য অপেক্ষা করছে । অটো করে স্কুলে চলে আসলাম এসে দেখি নানু আমার জন্য স্কুলের গেটে অপেক্ষা করছে আমি নানুর সাথে কথা বলে ক্লাসে চলে গেলাম প্রতিদিনের মতো আজকে ও সব ক্লাস ভালো ভাবে শেষ করে আমি ছুটির ঘন্টার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম ।তবে বেশিক্ষণ আমাকে অপেক্ষা করতে হয়নি কিছুক্ষণ পরেই ছুটির ঘন্টা দিয়ে দিলো আমি আমার বন্ধু দের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্কুলের গেট থেকে বের হতেই দেখি নানু আমার জন্য অপেক্ষা করছে নানুকে দেখে আমি একটু অবাক হলাম কারণ নানু আমাকে স্কুলে নিয়ে আসে কিন্তু যাওয়ার সময় আমি একাই যেতাম বা কখনো কখনো নানু আমাকে নিতে চলে আসতো ।

তবে আজকে তো নানুর আসার কথা ছিলো না  তাই আর কিছু না ভেবে  আমি তারাহুরা করে নানুর কাছে যেতেই নানু আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো  ” মনা তোমার আম্মু তোমাকে বাড়ি যেতে বলেছে” আমি নানুর কথা শুনে একটু ঘাবড়ে গেছিলাম কারণ আমি আজকেই বাসা থেকে রংপুরে এসেছি,  যেহেতু আম্মু ডেকেছে সেহেতু আমাকে বাসায় যেতেই হবে । তাই আর কিছু না বলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । প্রতিদিনের মতো আজকেও আমি আয়ানের জন্য চকলেট, চিপস আর ওর পছন্দের দই নিলাম ।

বাসায় এসে জানতে পারলাম একটা সংগঠন  থেকে বিশাল বড় একটা কুইজ প্রতিযোগিতা  আয়োজন করা হয়েছে এবং সেখানে আমাকে সিলেক্ট করা হয়েছে,  এটা একটা উপজেলা ভিত্তিক আয়োজন, যেখানে ১৫ টা স্কুল নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে । আমি কিছুদিন আগে একটা পরিক্ষা দিয়েছিলাম সেখান থেকেই আমাকে বাছাই করে নিয়েছে,  আমি একটু ভয় পেলাম কারণ এতো বড় একটা আয়োজন আমি কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না,  তবে আম্মু, আব্বু আমাকে মনে জোড় দিয়েই যাচ্ছিল । 

আমি বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে একটা ম্যাম এর সাথে দেখা করলাম , সালাম দিতেই উনি বলে উঠলো আমরা তোমার পরিক্ষার খাতা দেখে খুবই খুশি হয়েছি এটা আপাদত উপজেলা ভিত্তিক হয়ে তারপর জেলা ভিত্তিকে যাবে আশা করছি তুমি পারবে ।  আমি ম্যাম কে বললাম ইনশাআল্লাহ্ ম্যাম দোয়া করবেন ।ম্যাম আমাকে ক্লাস থ্রি, ফোর আর ফাইভের বাংলা, ইংরেজি, গনিত,সাধারণ জ্ঞান মোট বারোটা বই পড়তে বললেন ।


আমি বাসায় এসে আম্মু কে বলতেই আম্মু বই খোঁজা শুরু করে দিলো । অবশেষে বই খুঁজে পেলো ,


তবে এতো তারাতারি বই ম্যানেজ করবে বুঝিনি। তখন আমি ভাইয়ের সাথে খেলছিলাম আম্মু রাগ হলো আর পড়তে বসতে বললো, যদিও ইচ্ছা  করছিল না তবুও বসতে হলো বিকাল  থেকে 8-৩০ পর্যন্ত পড়লাম। আবার ভাইয়ের সাথে খেললাম এভাবে মাগরিবের  আজান দিল। তারপর আম্মু আমাকে পড়তে বসতে বললো ,আমি বাধ্য ছেলের মতো পড়তে বসলাম , আমি পড়াশুনা শেষ করে আয়ানের সাথে খেলতে শুরু করলাম , আমার মনের ভিতর কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে সঙ্গে ভয় ভয় পাচ্ছিলাম কিন্তু আম্মু বারবার আমাকে সাহস দিয়েই যাচ্ছে তাই একটু ভরসা পাচ্ছিলাম । সারা দিনের ক্লান্ত শরীর কেমন যেন ঘুম পাচ্ছিল আমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।


পরের দিন সকালে আবার পড়াগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিলাম , আজকে আম্মু আমাকে নিয়ে যাবে কারণ প্রতিযোগিতা  টা হচ্ছে যেখানে সেই জায়গাটা আমাদের বাসা থেকে একটু দূরে । আব্বু একটু ব্যস্ত তাই আমার সাথে যেতে পারছে না । আম্মু আমাকে রেডি হতে বলে আয়ান কে রেডি করে দিচ্ছে,  আমি ফ্রেস হয়ে রেডি হলাম ,এদিকে আমার আগেই আয়ান রেডি হয়ে বসে আছে , হালকা কিছু খেয়ে আমরা আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । অটো করে যাচ্ছিলাম আর আম্মু আমাকে বারবার সব কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছিল, অতঃপর আমরা পৌঁছে গেলাম , সেখানে পৌঁছে অটো থেকে নামতেই একটা ম্যাম আমাকে একটা ক্লাসে নিয়ে গেলো , আম্মু আমাকে ক্লাস রুমে ঢুকে দিয়ে রুমের বাহিরে চলে গেলো ।


আমি এখানের কাউকেই চিনি না , আমার খুব ভয় ভয় লাগছিল তারপরও মনে সাহস নিয়ে পরিক্ষা দিলাম ,আমাদের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পর অন্য অনুষ্ঠান শুরু হলো । একে একে খেলাধুলা, নাচ , গান ,আবৃত্তি ,হাতের লেখা ,আর্ট প্রতিযোগিতা হলো , এভাবে বিকেল হয়ে গেলো


এবার পুরস্কার ঘোষণা করার পালা আমার মনের ভিতর কেমন কেমন যেন একটা করছিলো আমি এদিক সেদিক আম্মু কে খুঁজতে ছিলাম হঠাৎ দেখি আম্মু আমার দিকে আসছে , আমি আম্মুকে দেখে দৌরে গেলাম আম্মু খুব টেনশন করছিলো অতঃপর যখন ঘোষণা করা হলো আমি দ্বিতীয় হয়েছি , আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো , আম্মুর চোখ দুটো ছলছল করছিলো পরে একে একে পুরস্কার দেওয়া হলো , আমি পুরস্কার হাতে পেয়ে খুব আনন্দিত হলাম । পুরস্কার পেয়ে এতো খুশি হলাম যা বলে বুঝাতে পারবো না সঙ্গে সঙ্গে আব্বু কে ফোন করে আমার দ্বিতীয় হওয়ার কথাটা জানিয়ে দিলাম আব্বু ও অনেক খুশি হলো । তারপর আমরা বাসায় চলে আসলাম । বাসায় এসেই নানুকে ফোন দিয়ে বললাম, নানু খুব খুশি হলো ।


পরদিন আবার আমি রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম , এভাবেই চলতে থাকলো আমার জীবন যাএা ।

● নাম : ঐশিক
স্কুল: Lions School And Collage,Rangpur.
ক্লাস : ফাইভ
বয়স: ১১

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.