হঠাৎ পরিচয়ে রক্তাক্ত শহর

হঠাৎ পরিচয়ে রক্তাক্ত শহর

আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানির মধ্যে চাকরি করি। আমার বাসা অফিস থেকে অনেক দূরে। বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায়। আমার নিয়মিত সিএনজি দিয়ে অফিসের মধ্যে আসা-যাওয়া করতে হয়৷

আমি একদিন এক সকলে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে, অফিসের মধ্যে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়৷ অন্যান্য দিনের মতো করে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে, আমি সিএনজি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু আজ রাস্তার চারদিক দিয়ে কোথাও কোন গাড়ি নেই। প্রায় অনেকটুকু সময় অপেক্ষা করার পর, একটি সিএনজি গাড়ি আমার দিকে আসতে লাগলো। আমি তখন গাড়িটি থামিয়ে, গাড়িটির ড্রাইভার’কে বললাম মামা আপনি কি যাবেন। তখন তিনি আমাকে বললো, আপনি কোথায় যাবেন। আমি তখন আমার অফিসের ঠিকানা বলি। তখন সে বললো, আমি যাবো। আমি তখন গাড়িতে উঠে পরি। গাড়ি দিয়ে যাওয়ার একটু পরে হঠাৎ করে আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়া শুরু করলো। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মাঝে হাল্কা ঠান্ডা বাতাস চলছে। অবশ্য, এতে আমার অনেক ভালো লাগছে। বৃষ্টি হওয়ায় শহরের রাস্তা অনেকটা প্রায় ফাঁকা। আমি গাড়ির ভিতরে বসে প্রকৃতির অনুভূতি উপভোগ করার চেষ্টা করছি।

ঠিক এই সময়, আমি যখন গাড়ির বাহিরে তাকিয়ে আছি। তখন আমার গাড়ির প্রায় অনেকটা দূরে একটি অচেনা অজানা মেয়ে দাড়িয়ে, আমার চলন্ত গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করছে। আমি তখন গাড়িটি থামানোর জন্য গাড়ির ড্রাইভারকে বলি, মামা একটু সামনে গাড়িটি থামান । গাড়িটি থামানোর পর রাস্তার পাশে দূরে দাড়িয়ে থাকা অচেনা অজানা মেয়েটি আমার দিকে দৌড়ে আসতে লাগলো। এই দৌড়ে আসার মাঝে আমি দেখলাম গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হওয়ার ফলে মেয়েটি প্রায় অনেকটা ভিজে গিয়েছে। তখন সেই মেয়েটি আমার কাছে এসে আমাকে বলতে লাগলো, আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ আছে। সময় মতো আমাকে আমার গন্তব্যের স্থানে যেতে হবে। হঠাৎ করে এমন মধুর কন্ঠের কথা শুনে, নিজের মনের গভীরে এক অজানা অনুভূতি কাজ করছে।

আমি বললাম, আপনি কোথায় যাবেন?

সে মেয়েটি তার গন্তব্যের স্থানের কথা বললো। আমি তখন মেয়েটিকে বলি, আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি গাড়ির ভিতরে আসেন। সেই মেয়েটি যখন গাড়ির ভিতরে আসার জন্য আমার কাছে আসতে লাগলো, আমি হঠাৎ করে সেই মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি৷ এই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝে, আমি তার চোখের গভীরে এক অদৃশ্য ভালোবাসার মায়া দেখতে পেয়েছি। তখন মেয়েটি গাড়ির ভিতরে আমার পাশে এসে বসলো৷ বৃষ্টি হওয়ার ফলে তখন মেয়েটির শরীর প্রায় অনেকটা ভিজে গিয়েছে। ভিজা শরীরে মেয়েটিকে এক অদ্ভুত রকমের সুন্দর লাগছে। অবশ্য, মেয়েটি দেখতে কেমন তা বুঝার কোন উপায় নেই৷ কারণ, মেয়েটি খুব কালো রঙের বোখরা ও হিজাব পরে ছিলো। মেয়েটি বোখরা ও হিজাব পড়ার ফলে, তার শরীরের শুধুমাত্র চোখ দুটি ছাড়া অন্য কোন কিছু দেখা যাচ্ছিলো না। কেন জানি বারবার শুধুমাত্র মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার খুব মনে চাচ্ছে।

এই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে একই গাড়ির ভিতরে, আমার পাশে এক অচেনা অজানা অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী মেয়েটি বসে থাকার ফলে, আমার নিজের কাছে এক অদ্ভুত রকমের সুন্দর অনুভূতি হচ্ছে। অনেকটা পথ যাওয়ার পর, আমি তখন মেয়েটিকে বলি। আপনি এখন কি করেন? তখন সে মেয়েটি আমাকে বললো, আমি একটি অফিসের মধ্যে চাকরি করি। আজ অফিসের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং আছে। সময় মতো অফিসের মধ্যে না যেতে পারলে, আমার অনেকটা ক্ষতি হয়ে যাবে। অবশ্য, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তখন আমি বলি, আপনি আমাকে হঠাৎ করে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন কেন? তখন মেয়েটি আমাকে বললো, আজ আপনার জন্য আমি আমার অফিসের মধ্যে সময় মতো যেতে পারবো, তাই।

আমি তখন এই অচেনা অজানা মেয়েটিকে বলি, আপনি অনেক সুন্দর করে কথা বলতে পারেন। তখন মেয়েটি আমার কাছ থেকে এমন কথা শুনে অনেকটা মুচকি হাসি হাসলে লাগলো।

আমি তখন আবার বলি, আপনার শখ কি? অবশ্য সব সময় আপনার কি করতে অনেক ভালো লাগে। তখন মেয়েটি আমাকে বললো, গান গাইতে আমার অনেক ভালো লাগে। তখন সে আমাকে বললো, আপনার শখ কি? আমি তাকে বললাম, আমার বই পড়তে অনেক ভালো লাগে। আস্তে আস্তে আমরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন রকম বিষয় নিয়ে অনেক কথা বলতে থাকি। অবশ্য, আমি এই অচেনা অজানা মেয়েটির সঙ্গে যতই কথা বলি, আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। আমার মনের গভীরে মেয়েটির সঙ্গে বারবার কথা বলার খুব তীব্র আগ্রহ তৈরী হয়ে থাকে। অবশ্য, এই অচেনা অজানা মানুষটির সঙ্গে অনেক কথা বলে ফেলি।

এই অচেনা অজানা মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার মাঝে, আমি আমার মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছি। সত্যি কথা বলতে, এই মেয়েটির মাঝে আমি ভালোবাসার সুপ্ত অনুভূতি খুঁজে পাচ্ছি।

আমাদের বিভিন্ন রকমের কথা বলার মাঝে, আস্তে আস্তে বৃষ্টি পড়া শেষ হয়ে গিয়েছে। এর মাঝেই আমি আমার অফিসের কাছে প্রায় চলে এসেছি। অবশ্য, মেয়েটির অফিস আমার অফিস থেকে প্রায় অনেক দূরে। অবশ্য মেয়েটির অফিস থেকে আমার অফিস কাছে হওয়ায়, আমাকে আগে গাড়ি থেকে নেমে পরতে হবে৷

আমার হঠাৎ করে মনে হলো, আমি এই অচেনা অজানা মেয়েটির সঙ্গে অনেক কথা বলছি৷ কিন্তু মেয়েটির নামটা আমার এখনো জানা হলো না। আমি তখন মেয়েটিকে বলি, আপনার নাম কি? তখন সে কোন কথা না বলে, আমার দিকে এক অদ্ভুত ভাবে তাকালো। আমি তখন নিজের থেকেই আমার নাম বলি, আমার নাম হলো, সাহেদ। আপনার নামটা কি? এভাবে আমি তাকে একবার, দুবার, তিনবার প্রশ্ন করেছি। কিন্তু তবুও এই মেয়েটি নিজের নামটি আমাকে বললো না। ইতিমধ্যে, আমি আমার অফিসের গেইট এর কাছে চলে এসেছি। তখন গাড়ির ড্রাইবার, গাড়িটি আমার অফিসের কাছে থামিয়ে দিলো। আমি তখন মেয়েটির সঙ্গে আর কোন কথা না বলে, গাড়ি থেকে নেমে পড়েছি। গাড়ি থেকে নামার সময়, আমি মেয়েটির দিকে অনেকবার তাকিয়েছি। তখন মেয়েটিও আমার দিকে এক অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিলো। তবে সে আমার সঙ্গে কোন কথা না বলে, আমাকে দেখে মুচকি হাসি হাসলো। আমি তখন হাসি মুখে মেয়েটিকে বিদায় দিয়ে, আমি আমার অফিসের ভিতরে চলে গিয়েছি।

আমি আমার অফিসের ভিতরে যাওয়ার একটু পরে। আমার অফিস থেকে ঠিক একটু দূরে, একটি চার রাস্তার মোড়ে। বড় ট্রাক এর সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি সিএনজি গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে৷ গাড়ি এক্সিডেন্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে ঘটনা স্থলের চারদিকে অনেক মানুষ ভিড় হতে লাগলো৷ গাড়ি এক্সিডেন্ট হওয়ায়, শহরের রাস্তা রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে।

হঠাৎ করে এমন গাড়ি এক্সিডেন্টের কথা শুনে, আমার মনের মাঝে খুব অনেকটা আঘাত লাগলো৷ সে গাড়ি এক্সিডেন্ট এর জায়গার মধ্যে যাওয়ার জন্য, আমার মনের মাঝে কৌতূহল তৈরি হলো। আমি তখন অফিস থেকে বেড়িয়ে, তারাতাড়ি ঐ গাড়ি এক্সিডেন্টের ঘটনা স্থলে গেলাম৷

আমি সে গাড়ি এক্সিডেন্ট এর ঘটনা স্থলে গিয়ে, আমি অনেকটা অবাক হয়ে গিয়েছি। সেখানের সকল কিছু দেখে, কোন কিছু বলার ভাষা আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমি তখন দেখি সে সিএনজি আর অন্য কোন গাড়ি নয়, বরং আমি ও এক অচেনা অজানা মেয়েটি যে গাড়ি দিয়ে এসেছি ঠিক সেই গাড়িটি এক্সিডেন্ট করছে। সেই এক্সিডেন্ট হওয়া গাড়ির পাশে রক্তাক্ত অবস্থায়, কালো রঙের বোখড়া পড়া একটি মেয়ের মৃত লাশ পরে রয়েছে। আমি তখন শহরের রক্তাক্ত রাস্তার মাঝে পরে থাকা, রক্তাক্ত লাশের সামনে গিয়ে দেখি। সে মেয়েটি আর কেউ না, আমার সঙ্গে আজ সকালে যে অচেনা অজানা মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, সেই মেয়েটি। সকল কিছু দেখে আমি বাকরূদ্ধ হয়ে গিয়েছি। আমি তখন সকলের সামনে খুব চিৎকার করে প্রচুর কান্না করতে লাগলাম। এই কান্নারত অবস্থায়, রক্তাক্ত মৃত লাশ হওয়া মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে বলি ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি’।

○ মো: সজিব মিয়া , ব্রাক্ষণবাড়িয়া ।।

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.