ভারতে ব্যান্ডউইথ দেওয়ার প্রস্তাবে তোলপাড়

ভারতে ব্যান্ডউইথ দেওয়ার প্রস্তাবে তোলপাড়

editবাংলাদেশ থেকে ভারতে ব্যান্ডউইথ দেওয়ার প্রস্তাবে তোলপাড়

এম. মিজানুর রহমান সোহেল

 

বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণ ব্যান্ডউইথ থাকার পরেও তা ব্যবহার না করার কারণে দেশে যেমন নেট স্পিড কম তেমনি চড়া মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস। এমন সময়ে দেশের ব্যান্ডউইথ ভারতে রপ্তানি করার প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করার পর থেকে দেশে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে এই নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। জানা গেছে, ভারতে স্থলবেষ্টিত ৭টি রাজ্যের তথ্য-প্রযুক্তি খাত ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ চেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশে ২০৮ গিগাবাইট অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ থেকে ৫০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ ভারতে রপ্তানি করবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইথ রয়েছে। তাই আলোচনায় উভয়পক্ষ সম্মত হলে ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

 

সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা সফররত দেশটির একটি প্রতিনিধি দল। একই বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানির জন্যও আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়া হয়। এ প্রস্তাবে সরকার সায় দিলে দেশটি বাংলাদেশ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য ৫০ গিগাবাইট পার সেকেন্ড (জিবিপিএস) ব্যান্ডউইথ আমদানি করবে। রাজ্যগুলো হচ্ছে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মনিপুর ও অরুণাচল প্রদেশ। ওইদিন দুপুরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচিত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। ১০ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের একজন যুগ্ম সচিব। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন এবং ভারতীয় হাইকমিশনের দুজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

 

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলকে দুটি বিষয়েই লিখিত প্রস্তাব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। লিখিত প্রস্তাবের পরই তা পর্যালোচনা করে দেখা হবে বলে তাদেরকে জানানো হয়। তবে তাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয়, বাংলাদেশের কাছে উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইথ থাকায় তাদের পক্ষে ভারতের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার সুযোগ আছে। বিষয়টিকে এগিয়ে নেওয়ার আগে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব জরুরী। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ব্যান্ডউইথ রপ্তানির ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মতি রয়েছে। তবে ভারতের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব না পাওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে আর অগ্রসর হওয়ার সুযোগ নেই। বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, শিগগিরই তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠাবে।

 

জানা গেছে, ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ থেকে আলোচিত রাজ্যগুলোর প্রত্যেকটির জন্য ১০ গিগাবাইট করে ব্যান্ডউইথ আমদানির প্রস্তাব দেন। সরকার সম্মত হলে ওই রাজ্যগুলোর জন্য সম্মিলিতভাবে ন্যূনতম ৫০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ আমদানি করবে তারা। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যান্ডউইথ সামর্থ্য ২৫০ গিগাবাইট প্রতি সেকেন্ড (জিবিপিএস)। এর মধ্যে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলের রয়েছে ২০০ গিগাবাইট। দেশে বর্তমানে মাত্র ৪২ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ ব্যবহৃত হয়। বাকী ২০৮ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথই অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে।

 

সূত্র জানিয়েছে, ভারতে সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত রাজ্যগুলোর জন্য ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে চায় ভারত। তারা বাংলাদেশের আখাউড়া অংশ দিয়ে ত্রিপুরা এবং বাংলাবান্ধা অংশ দিয়ে দার্জিলিং হয়ে ব্যান্ডউইথ নিতে চায়। তবে এসব অংশে লিংক ক্যাবল নেই। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে লিংক লাইন স্থাপন করতে হবে। ব্যান্ডউইথ রপ্তানি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, ভারত যতটুকু চাচ্ছে তার দ্বিগুণ ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করা সম্ভব। তবে আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট রক্ষণশীল। দ্রুত বেড়ে চলা চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা এগুচ্ছি। দেশের ভেতরেও দ্রুত ব্যান্ড উইথ চাহিদা বাড়ছে। বর্তমানে দেশে ৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন, যাদের বড় অংশই পর্যাপ্ত গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। গতি বাড়াতে হলে তাদেরকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দিকে যেতে হবে। তাতে ব্যান্ডউইথের চাহিদাও বাড়বে। এছাড়া তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তি বা থ্রিজি চালু হলেও ব্যান্ডউইথের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

 

বর্তমানে প্রতি মেগাবাইট ব্যান্ডউইথ ৪ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করে সাবমেরিন ক্যাবল। ভারতের কাছেও একই দামে তা বেচা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যান্ডউইথের দাম নিয়ে এখনও তাদের সঙ্গে কোন আলোচনা হয়নি। সবার আগে কারিগরি দিক ও সম্ভাব্যতা দেখা হচ্ছে। এরপর দাম নিয়ে আলোচনা হবে। তবে স্থানীয় বাজারের দামে কখনোই রপ্তানি হওয়া উচিত না। আন্তর্জাতিক দামেই ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করা হবে। এদিকে বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ, সড়ক ও নৌপথের ট্রানজিটের পাশাপাশি নতুন করে টেলি-ট্রানজিট সুবিধা চেয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। এ সুবিধার আওতায় তারা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অপটিক্যাল ফাইবার নিয়ে যাবে। রাজ্যগুলোর তথ্য-প্রযুক্তি খাত ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এ সুবিধা চেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

 

এদিকে এই নিয়ে ফেসবুকে আনেকেই সমালোচনা করেছেন। আমাদের গ্রামের প্রধান নির্বাহী রেজা সেলিম লিখেছেন, উদ্বৃত্ত হয় কখন? গোলা ভরে রেখে দিলে নাকি সবাইকে দেবার পর জমা থাকলে? এখনও দেশ জুড়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছায়নি! মোবাইলওয়ালারা কী সব হাবিজাবি বুঝায় ওরা বুঝে আর সরকার বুঝে, আমরা বুঝিনা! আমাদের ইন্টারনেট নেই, কিন্তু দরকার। আর তা হতে হবে ভাল মানের, উচ্চগতির ও নিরবিচ্ছিন্ন! যখন ইন্টারনেট আনলেন বিদেশ থেকে টাকা কর্জ করে, সেই টাকা জাতি শোধ করে দিয়েছে আর তা নিজের জন্যে পাবে বলেই। আমাদের ঠিকমতো সব দিয়ে নেন, তারপর বাকীটা আপনি কি করবেন ভেবে দেখেন।

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.