বাংলাদেশে পাইরেসি বন্ধে মাইক্রোসফট

বাংলাদেশে পাইরেসি বন্ধে মাইক্রোসফট

4এম. মিজানুর রহমান সোহেল

পাইরেটেড সফটওয়্যারের ওপর ভাসছে বাংলাদেশ। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বে পাইরেটেড সফটওয়্যারের দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এবার এই ধারাবাহিকতা বন্ধ করতে উদ্যোগ নিয়েছে মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেড। এরই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি পাইরেটেড সফটওয়্যার বিক্রি বন্ধে বিভিন্ন অংশীদার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে।

এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাইরেটেড বা অননুমোদিত সফটওয়্যার বিক্রির কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

মাইক্রোসফট বাংলাদেশের অ্যান্টি-পাইরেসি ব্যবস্থাপক জিয়া এল শামস আহমদ স্বাক্ষরিত এ চিঠির সঙ্গে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন কপিরাইট অফিসের একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি সংযুক্ত করা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে সম্প্রতি কপিরাইট-সংক্রান্ত আইন বিষয়ে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে।

নতুন কম্পিউটার বিক্রির সময় তাতে পাইরেটেড বা গ্রে মার্কেট থেকে সংগৃহীত মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার না করতে নিরুত্সাহিত করা হচ্ছে।

মাইক্রোসফটের লাইসেন্স অপারেটিং সিস্টেম নতুন বিক্রি হওয়া সব কম্পিউটারে সংযুক্ত করতে হবে।

পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের কারণে কোনো ক্রেতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারে।

পাশাপাশি যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে এসব কম্পিউটার কেনা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারে।

এছাড়া আগে থেকে বিক্রি হওয়া যেসব কম্পিউটারে পাইরেটেড মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার হচ্ছে, সেসব কম্পিউটার যন্ত্রাংশ মেরামত না করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কপিরাইট আইন, ২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) এর ধারা ৮২ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার সফটওয়্যার জাল বা নকল করলে তা অপরাধ এবং আইনত দণ্ডনীয়।

এজন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনি তল্লাশি ও বিচারের সম্মুখীন হতে পারে এবং অপরাধী সাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং সর্বোচ্চ চার বছরের জেল হতে পারে।

এ-বিষয়ে মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের হার অনেক বেশি। বিদ্যমান আইনেও এটি শাস্তিমূলক অপরাধ।

এজন্য ১৩০টিরও বেশি অংশীদার প্রতিষ্ঠানকে অ্যান্টি-পাইরেসি বিভাগ থেকে সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করছে ইনগ্রাম মাইক্রো (ভারত) এক্সপোর্টস প্রাইভেট লিমিটেড ও মাল্টিমুড লিমিটেড।

এছাড়া গোল্ড সার্টিফাইড, সার্টিফাইড এবং রেজিস্টার্ড হিসেবে কাজ করছে শতাধিক প্রতিষ্ঠান।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাইক্রোসফটের দুই ধরনের জেনুইন অপারেটিং সিস্টেম বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে স্টুডেন্ট ভার্সনের বাজারদর ১৬ হাজার আর প্রফেশনাল সিস্টেমের দাম পড়ে ২৭ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, জেনুইন ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেমের দাম অনেক বেশি। এটি ব্যবহার করলে পুরো কম্পিউটার সিস্টেমের দামও বেড়ে যাবে।

এ দেশে ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতা এখনো তেমন বাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাইক্রোসফটের উচিত সুলভ মূল্যে অপারেটিং সিস্টেম বাজারজাত করা।

অংশীদার প্রতিষ্ঠান বিক্রি না করলেও অন্যরা পাইরেটেড সফটওয়্যারসহ কম্পিউটার সিস্টেম বিক্রি চালিয়ে যাবে। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারাও তাদের কাছ থেকেই কম্পিউটার কিনবে। মাঝখান থেকে আমাদের মতো বিক্রেতারা বাজার হারাবে।’

এ প্রসঙ্গে মোস্তফা জব্বার বলেন, সফটওয়্যার তৈরি করা হয় বিক্রির উদ্দেশ্যে। সরকার কখনই পাইরেসিকে সমর্থন করে না।

তবে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় মাইক্রোসফটের মতো দামি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার মতো সঙ্গতি নেই।

মাইক্রোসফট যদি বাংলাদেশের বাজারের জন্য গ্রহণযোগ্য দামে অপারেটিং সিস্টেম না ছাড়ে, তাহলে তাদের মামলা-মোকদ্দমার মধ্যেই থাকতে হবে। অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.