
সময় টা ছিলো ৭ ই জানুয়ারি ২০১৪ সে দিনটার চিএ ছিলো সম্পন্ন ভিন্ন ।
তবে প্রতি দিনের মতো সেই দিনটাতেও ঘুম থেকে উঠা , খাওয়া দাওয়া করা আর নীরু মামার পাশে বসে গল্প করা ।
এটা আমার ছিলো আমার প্রিয় নীরু মামার সাথে কাটানো শেষ মুহূর্ত ।
সময় খুব দ্রুতই চলে যায়, কিন্তু থেকে যায় কিছু স্মৃতি।
নীরু মামা কানাডা থেকে আসার পর থেকেই হাসপাতালে ছিলো , পুরো ২ মাস আমরা নীরু মামার খুব পাশাপাশি ছিলাম , প্রতিদিন কিভাবে কেটে ছিলো শুধু সেটা উপর আল্লাহ্ যানে ।
৭ তারিখ ২০১৪ ….
৭ তারিখ আমরা লুনা খালামনির বাসায় যাব তার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম
ঠিক সকাল ১০ টায় আম্মু নীরু মামার জন্য পায়েস নিয়ে এসে নীরু মামাকে দিলো তবে মামা বললো খাবে না কারন শুধু মামাকেই পায়েস দিয়েছে আমাকে কেন দেয় নি তাই নীরু মামা আম্মুকে বললো
— তুই শুধু আমার জন্যই পায়েস এনেছিস আমার মা টার পায়েস কই ?
আম্মু তখন মামাকে বললো
— ও পরে খাবে তুই খেয়ে নে
নীরু মামা খানিকটা রাগ করেই আম্মুকে বললো আমার মার জন্য পায়েস আন না হলে আমিও খাবো না
আমি চুপচাপ করে চেয়ারে বসে ছিলাম
আম্মু যখন আমার জন্য পায়েস আনতে গেলো ঠিক তখনি নীরু মামা আমাকে বলতে লাগলো
— ” মা জানো এই তোমার আম্মুকে নিয়ে আর পারি না এতো ভয় আরে ভাই বোনের বাসায় গেলে সব কিছু নিজের মনে করতে হয় কতক্ষণে ভাই বোন দিবে তার আশায় বসে থাকে এতো কষ্ট করে ভাই বোনদের মানুষ করছে আর এখন সেই ভাই বোন দের থেকে কিছু নিতে তার এতো ভয়
এই দেখো পায়েস আনতে গেছে কিন্তু তার এখনো দেখা নাই কতক্ষণে তোমার মানু খালামনি দিবে তারপর আনবে ।”
মামার এসব শুনে আমি বললাম মামা চিন্তা করিও না আম্মু আমার জন্য ঠিক নিয়ে আসবে তুমি খেয়ে নাও ।
মামা তখন বললো নাহ্ নাহ্ আগে তোমার আম্মু নিয়ে আসুক আজকে আমরা একসাথে খাবো আর অনেক গল্প করবো ,
আমি বললাম ঠিক আছে মামা।
ঠিক তখনি আম্মু রুমে পায়েস নিয়ে ঢুকলো
নীরু মামা আম্মুকে উদ্দেশ্যে করে বললো পায়েস টা আমার মাকে দে
আম্মু আমার হাতে পায়েস দিয়ে চলে গেলো ডাইনিং রুমে
আমি আর নীরু মামা পায়েস খাচ্ছিলাম আর নীরু মামা গল্প করছে সেটা খুব মন দিয়ে শুনছিলাম
হঠাৎ মামা আমাকে প্রশ্ন করল ” আচ্ছা মা তোমাদের বাসার পাশে কি রেললাইন আছে ?
আমি বললাম না মামা নেই কিন্তু নানু বাড়ির সামনে তো রেল লাইন আছে
তখন মামা আমাকে বললো ,
— আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি প্রতিদিন সকালে রেললাইনে হাঁটতে যাবো সারাদিন হাঁটবো যানো আমার না রেললাইনে হাঁটতে খুব ভালো লাগে
সারাদিন ঘোরাফেরা করে রাতে এসে তোমাদের সাথে থাকবো আচ্ছা তোমাদের ওই খান থেকে রেললাইন কতদূর,
আমি বললাম অনেক দুর
তখন মামা বললো আমি তো পীরগাছার বাড়িতে ঢুকবো না কিন্তু দূর থেকে তোমার নানু আপুর সাথে কথা বলবো , কামরাঙার গাছের নিচে বসে গল্প করবো
আচ্ছা তোমাদের পুকুরে কি এখনো অনেক মাছ আছে তোমার মনে আছে আমরা একবার সবাই গেলাম তোমাদের বাসায় তোমার আব্বু কথাথেকে একটা জাল নিয়ে আসলো ফেলতেই অনেক অনেক মাছ উঠলো কি বড় বড় চিতল মাছ
আমি বললাম– হ্যাঁ মামা মনে আছে
মামা হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো ঐশির বাসাটা কতদূর
আমি বললাম বাজারের পাশেই
মামা তখন আমাকে বললো পীরগাছায় গেলে ঐশির বাসায় আমাকে নিয়ে যাইও তো ওর বাচ্চা টা বড় হইছে অনেক তাই না
আমি বললাম — হ্যাঁ
মামা বললো তোমাদের বাসায় শেষ রোজার ঈদে গেলাম অনেক ছবি তুললাম ছবি গুলো আমার কাছে এখনো আছে
ঠিক তখনি কেন যানি মামার মন টা খারাপ হয়ে গেলো আর আমাকে বললো
–তোমার আব্বু টাহ কেমন যানি
—-” যানো মা আমি সারাক্ষণ আল্লাহ্ কে বলি আল্লাহ্ যাতে আমাকে আর দুইটা বছর বেঁচে রাখে আমি তো যানি তোমার আম্মুর কত কষ্ট, ওই বাড়িতে তোমার আম্মু থাকতে পারে না , আল্লাহ্ আমাকে দুই বছর বাঁচিয়ে রাখলে ঢাকায় আমি একটা ফ্ল্যাট নেবো
তার পর তোমাকে আর তোমার আম্মুকে আমি ওই খানে রাখবো
আর আমি তো এই খানে থাকতে পারবো না তোমার মামি, সাবাবা ওই খানে থাকে আমাকেও তো ওই খানে যাইতে হবে তবে ৬ মাস পর পর তোমাদের কাছে আসবো , অনেক জায়গায় ঘুরব “
আমি চুপচাপ মামার কথা শুনে গেলাম
মামার সাথে কথা বলতে বলতে আমার পায়েস শেষ হয়ে গেলো তখন মামা হাতের ইশারায় আমাকে তার কাছে ডাকলো
আমি গেলাম তখন মামা আমাকে উনার ভাগের পায়েস থেকে কিছুটা আমাকে দিলো আমি নিয়ে খাইলাম
তখন আম্মু রুমে আসলো ।
আমাদের পায়েস খাওয়ার পর মানু খালামনি আমাদের রেডি হইতে বললো
অনেকক্ষণ পর আমরা ( আমি, আম্মু, মীম, মুহু) লুনা খালামনির বাসায় গেলাম , হঠাৎ করেই মানু খালামনি আম্মু কে ফোন করে বললো মামা নাকি কেমন করছে তাই আমাদের এখনি বাসায় চলে যেতে হবে
আমরাও খুব তারাতারি করে বাসায় চলে আসলাম
সেদিন আমারো প্রচন্ড জ্বর এসেছিলো তাই আমি মামার পায়ের কাছে শুয়ে ছিলাম, নীরু মামা বারবার আমার দিকে দেখছিল আর আম্মুকে বলছিলো ওকে ওষুধ দে !
বিকেল টা এভাবেই কেটে গেলো সন্ধ্যার পর সবাই মিলে গল্প করলাম আমি ঢাকা যাওয়ার পর থেকেই মামার ফোনে গেমস খেলতাম তাই মামা সবাই কে বললো ওই ফোনটা আমাকে দিয়ে দিতে আমি যাতে গেমস খেলতে পারি
তারপর আরো অনেক গল্প করলো মামা
রাতে খাবার খেয়ে আমি আম্মু শুয়ে পরলাম মামাও শুয়ে পরেছে
হঠাৎ পাঁচ থেকে দশ মিনিট পর মামা কেমন যানি করছিলো আম্মু দূরে গিয়ে খালুকে ডেকে আনলো
আমরা সবাই রুমের বাইরে ছিলাম রুমের ভিতরে আম্মু খালামনি আর খালু ছিলো
আল – তামাস খালু মামাকে পানি খাওয়াইলো
বাইরে দারিয়ে আমরা কান্না করছিলাম
হঠাৎ করেই সব কিছু নিশ্চুপ হয়ে যায়
সবার এক এক করে রুম থেকে বাইরে বের হয়ে কান্না করা শুরু করলো
আমি হতভম্ব হয়ে চুপচাপ মামার পাশে গিয়ে বসলাম
মামার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি এক ধান্দায় পাশে বসে দোয়া পারছিলাম আর আনমনে মামার দিকে তাকিয়ে আছি চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে এই তো একটু আগে মামা আমার সাথে কথা বললো হঠাৎ মামা কেন নিশ্চুপ হয়ে গেলো
ঠিক তখনি মামা খুব জোরে একটা নিশ্বাস ছারলো মামার মুখ যেহেতু আমার দিকে করা ছিলো তাই নিশ্বাস টা আমার গায়ে এসে পারলো
আমি আর দেরি না করে এক দূরে সবার কাছে গেলাম আর বলতে লাগলাম মামা তো বেঁচে আছে মামা মরে নাই তো
আমার কথা শুনে সবাই রুমে চলে আসলো সবাই খানিকটা অবাক হয়ে গেলো
হঠাৎ করেই ফ্লাটের একজন ডাক্তার আসলো মামাকে চেক আপ করলো বললো হ্যাঁ কিছুক্ষণ আগেই উনি মারা গেছে কান্নায় ভেঙে পরলো সবাই একটু পর লুনা খালামনি আসলো মুন্নি খালামনি জোত্যি মামা আসলো সবাই কান্না কর ছিলো
তার পর,
অনেকক্ষণ পর আমরা মামাকে নিয়ে পীরগাছার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম পীরগাছায় আসার পর কামরাঙার গাছের নিচে মামাকে রাখা হলো তার পর মামাকে মাটি দেওয়া হলো এক নিমেষে বদলে গেল সবকিছু
চোখের আড়াল হলো মামা , হারিয়ে ফেললাম আমরা আমাদের নীরু মামাকে ।
আল্লাহ্ তোমার কাছে একটাই চাওয়া আমার মামাকে তুমি জান্নাতবাসি করিও
যেখানেই থাকো অনেক ভালো থাকো মামা ।
-অর্পিতা ঐশ্বর্য কামাল কাছনা রংপুর ।।