সময়ের কথা: অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আবারও কানাডার ফেডারেল নির্বাচনে বিজয় লাভ করলো লিবারেল পার্টি। গত কয়েকদিন ধরে এ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে জাস্টিন ট্রুডোর দল মা্ইনরিটি আসন পেয়েছে। তাদেরকে দল গঠন করতে হলে অন্য কোন দলকে সাথে নিতে হবে। জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারেল পার্টির এ বিজয় খুব একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না জনগনের কাছে। বিভিন্ন নির্বাচনী জরিপে লিবারেল পার্টির জয়ের সম্ভাবনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে আসছিল অনেকদিন ধরে্ই। পার্লামেন্টের মোট ৩৩৮ টি আসনের মধ্যে লিবারেল ১৫৭ টি আসনে জয়লাভ করে। কনজারেভেটিভ পার্টি পায় ১২১ টি, ব্লক কুইবেক ৩২ টি, এনডিপি ২৪ টি ও গ্রীণ পার্টি ৩টি আসন পায়। নিরবাচনে নিরঙ্কুশ সংল্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে আসন দরকার ১৭০টির।
জাস্টিন পিয়েরে জেমস ট্রুডো (জন্ম ২৫শে ডিসেম্বর,১৯৭১) কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে ২০১৫ সালে দেশটির ২৩ তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। জো ক্লার্কের পর তিনি কানাডার দ্বিতীয় কম বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার পিতা পিয়েরে ট্রুডোও কানাডার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পিয়েরে ট্রুডো তিনবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
অটোয়াতে জন্ম নেয়া ট্রুডো কলেজ জিন-দ্যে-ব্রেবুফ এ পড়ালেখা করেন। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এবং ১৯৯৮ সালে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে দেয়া একটি বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সবার প্রথম জনসমক্ষে নিজের স্বীয় ব্যক্তিত্ব তুলে ধরেন। স্নাতক শেষ করে ট্রুডো ভ্যানকুভারের ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৩ সালে চাকরি ছাড়ার আগে তিনি মন্ট্রিলের ইকোল পলিটেকনিক থেকে এক বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম শেষ করেন। ২০০৫ সালে জাস্টিন ট্রুডো ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশগত ভূগোলে স্নাতকোত্তর শুরু করলেও এক বছর পরেই তা থেকে অব্যাহতি নেন। “দ্যা গ্রেট ওয়ার” নামক একটি টিভি মিনিসিরিজে তিনি নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগান।
বাবার মৃত্যুর আট বছর পর ট্রুডো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ২০০৮ সালের ফেডারেল ইলেকশনে তিনি হাউজ অব কমন্সে নির্বাচিত হয়ে লিবারেল পার্টির যুব ও সংস্কৃতি বিভাগের একজন সমালোচক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী বছর তিনি নাগরিক ও ইমিগ্রেশন বিভাগের সমালোচকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে সেকেন্ডারী শিক্ষা এবং যুব ও সৌখিন খেলাধূলা বিভাগের সমালোচকের দায়িত্ব পান। ২০১৩ সালের এপ্রিলে ট্রুডো লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব পান। ২০১৫ সালে তার নেতৃত্বে ১৮৪ এর মধ্যে ৩৬ টি আসন পেয়ে কানাডার ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে লিবারেল পার্টি সরকার গঠন করে।
ডায়োনের অবসরের পর ২০০৮ সালে লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণের সুযোগ জাস্টিন ট্রুডর হাতে আসে। অন্য সব প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঝে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে তিনি লিবারেল পার্টির জনপ্রিয় নেতা হিসেবে স্বীকৃত পান।
কিন্তু জাস্টিন ট্রুডো দায়িত্ব গ্রহণ করেন না বরং ইগ্নাটিফ নেতা হিসেবে ২০০৮ সালে ডিসেম্বরে লিবারেল পার্টির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১১ সালের নির্বাচনে লিবারেল পার্টির শোচনীয় অবস্থার পর ইগ্নাটিফ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। জাস্টিন ট্রুডো পুনরায় লিবারেল পার্টির অবশ্যম্ভাবী নেতা হিসেবে উঠে আসেন।
২০১২ সালের সেপ্টেম্বরেই একাধিক মাধ্যমে বলা হয় জাস্টিন ট্রুডো এবারের নির্বাচনে লিবারেল পার্টিকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন। যদিও তার যোগ্যতা নিয়ে সবস্ময়ই সমালোচকদের প্রশ্ন ছিল। পার্লামেন্টে থাকা অবস্থায় তাকে কখনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমনঃ অর্থনৈতিক বা পররাষ্ট্রনীতি ব্যাপারে কথা বলতে দেখা যায় নি। অনেকে মনে করেন তার সেলিব্রিটিসুলভ স্ট্যাটাসের কারণে তিনি ততোধিক জনপ্রিয় আর একারনে হয়তো আরো অভিজ্ঞ ও পটু নেতৃত্ব থেকে কানাডা বঞ্চিত অতে পারে।
উল্লেখ্য, কানাডা একটি ফেডারেশন যাতে সংসদীয় গণতন্ত্রভিত্তিক সরকারব্যবস্থা এবং একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রচলিত। কানাডার সরকার দুই ভাগে বিভক্ত। কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সরকার। শাসনিক অঞ্চলগুলির তুলনায় প্রদেশগুলিতে স্বায়ত্তশাসনের পরিমাণ বেশি। কানাডার বর্তমান সংবিধান ১৯৮২ সালে রচিত হয়।
তিন বাংলাদেশী কানাডিয়ান এবার ফেডারেল নির্বাচনে দু’টি বড় দলের প্রার্থী হন। তবে কেউ বিজয়ী হতে পারেননি। নির্বাচনে জয়ের পর উচ্ছ্বসিত ট্রুডো বলেছেন, এ বিজয় সবার। আমরা একসঙ্গে ভবিষ্যতের জন্য কাজ করব।
অভিনন্দন জাস্টিন ট্রুডো ও লিবারেল পার্টি।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া
One Response to "জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে আবারও বিজয়ী হল লিবারেল পার্টি"