সময়েরকথা ডেস্কঃ মাত্র ২৩ বছর বয়সী অভিযুক্ত তরুণ মিনহাজ জামান। একে একে প্রথমে মা, এরপর নানী, এরপর বোন এবং সবশেষে বাবাকে খুন করেন মিনহাজ। পরিবারের সদস্যদের খুনের বর্ণনা এভাবেই তিনি উল্লেখ করেছেন একটি অনলাইন চ্যাট রুমে।
টরন্টোর সিটি নিউজ সূত্রে প্রাপ্ত বার্তাগুলিতে বলা হয়েছে – ২৩ বছর বয়সী খুনের সন্দেহভাজন, মিনহাজ জামান এবং অন্য এক অনলাইন গেমারের মধ্যে তিনি কথোপকথন পরিবারের সদস্যদের খুনের কথা উল্লেখ করেছেন এবং নিহতদের ছবিও পাঠিয়েছেন।
মিনহাজ এবং ওই অনলাইন গেমার ‘পারফেক্ট ওয়ার্ল্ড ওয়য়েড’ নামক অ্যাডভেঞ্চার ফ্যান্টাসি গেমটির মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন।
স্ক্রিনশট অনুসারে অভিযুক্ত চার পরিবারের সদস্যকে হত্যার বিষয়ে লিখেছেন- “প্রথমে মা তারপর বৃদ্ধা এবং পরে বাবা,”
জামান আরও লিখেছেন, “আমি জানি এটি বিভ্রান্তিকর শোনায় তবে কী করা হয়েছে এবং যা পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা শেষ হয়েছে,”। তিনি হত্যার দৃশ্যের ছবিও পোস্ট করেছিলেন।
আরও লিখেছেন, “আমি সারা দিন কাঁপছিলাম।” কথোপকথনটির শেষে জামান লিখেছিল “পুলিশ এখানে, বিদায়”।
‘পারফেক্ট ওয়ার্ল্ড শূন্য’ এর প্রশাসক একটি বিবৃতি তে জানিয়েছে যে তারা এই মর্মান্তিক ঘটনাটা শুনে অত্যন্ত হতবাক হয়েছিলেন। তিনি বলেন, জামান শুরু থেকেই “নেক্সাস-ওয়য়েড” এ যুক্ত ছিল এবং বলেছিল যে তার এই পরিকল্পনার সম্পর্কে কারও কুনো ধারণাই ছিল না।
মিনহাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট হয়েছিলেন বলে হতাশাবোধ বোধ করতেন । জানা যায়, মিনহাজ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ত এবং দ্বিতীয় বছরে রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় ড্রপ আউট করেছিল।
“আমি হতাশ হতে শুরু করেছি, নাস্তিক হয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনাটি তৈরি করেছি,” তিনি লিখেছিলেন।
“… আমি চাই না আমার বাবা-মা আমার মতো ছেলের জন্ম নিয়ে লজ্জা বোধ করবেন।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “মেনহাজ দীর্ঘদিন ধরেই” ট্রল “হিসাবে পরিচিত এবং কিন্তু তার মধ্যে কখনও হত্যাচেষ্টার লক্ষণ বা অভিপ্রায় দেখা যায়নি।”
মিনহাজের ওই লেখা শেষ হয় এভাবে, ‘এখানে পুলিশ এসে গেছে, বিদায়’।
“মারুন” নামের প্রশাসক আরও বলেছিলেন যে জামানকে “স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আপত্তিজনক” বলে ১১ জুলাই গেমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কারণ ব্যবহারকারীরা তার নামে রিপোর্ট করেছিলেন।
তারা বলেছে যে কথিত অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে জামান ঘটনাস্থলে খুনের ছবি গেমিং প্ল্যাটফর্ম এর অন্যান্য মেম্বার দের কাছে তৃতীয় পক্ষের একটি অ্যাপের মাধ্যমে প্রেরণ করেছিলেন।
মিনহাজের বাড়ির অবস্থান জেনে যায় পুলিশ। এরপর পুলিশ গিয়ে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে এবং মিনহাজকে আটক করে।২০০২ সাল থেকে কানাডায় বসবাস করছিল ওই পরিবারটি। সম্প্রতি মনির ও মুক্তা জামানের ২৫তম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাদের বাড়িতে আয়োজিত একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে অনেক বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করেন। নিহতরা টাঙ্গাইল জেলার অধিবাসী।
এদিকে একই পরিবারের ৪ জন খুনের ঘটনায় কানাডার বাংলাদেশিদের মাঝে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।
পুলিশের ধারণা এটি একটি হত্যাকাণ্ড। নিহত দম্পতির আটক হওয়া ছেলেটি মানসিকভাবে অসুস্থ। সে মাদকাসক্ত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন, খাবারে কিছু মিশিয়ে অজ্ঞান করার পর ছুরিকাঘাতে তাদের হত্যা করে সে। এরপর সে গেম খেলতে থাকে।
পরিবারের সদস্যদের খুনের বিষয়টি সেই প্রথম মন্ট্রিলে থাকা তার এক বন্ধুকে ফোন করে জানায়।
Comments are closed.