২০০৯ সালের ২২ মে তাখিটা শাহ আবদুল করিমের জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন ছিলো। যদিও সেদিন তিনি স্বজ্ঞানে খুব স্বাভাবিক ছিলেন না, কিন্তু তাঁর চোখ মুখের অভিব্যক্তি বারবার বোঝাচ্ছিলো, তিনি অত্যন্ত আপ্লুত। সেদিন ছিলো ‘শাহ আবদুল করিম রচনাসমগ্র’ বইটির প্রকাশনা উৎসব, এবং সেটিই ছিলো কোনো অনুষ্ঠানে জীবিত অবস্থায় শাহ করিমের সর্বশেষ উপস্থিতি।
শাহ আবদুল করিমের গ্রন্থপ্রীতি ছিলো, কিন্তু তাঁর গ্রন্থভাগ্য মোটেও ভালো ছিলো না। সব সময় চাইতেন, তাঁর লেখা গানগুলো যাতে অন্য কারো উপকারে লাগে, সেজন্য গ্রন্থবদ্ধ করে রাখা। কিন্তু সেটা করতে অনেক অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল তাঁকে।
তাঁর প্রথম যে গানের বইটি বেরোয়, তার নাম ছিলো ‘আফতাব সঙ্গীত’। বইটির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও। ১৩৫৫ বাংলায় বইটি বেরিয়েছিল বলে সিলেটের প্রাচীন সাপ্তাহিক ‘দেশবার্তা’তে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি। ৪০টি গান ছিলো সে বইতে, দাম ছিলো বারো আনা। দ্বিতীয় বইটি প্রকাশ হয় ১৯৫৭ সালে, নাম ‘গণসঙ্গীত’। ১১টি গান দিয়ে ১৬ পৃষ্ঠার এ বইটির প্রকাশক হিসেবে নাম ছিলো ‘ছনাওর রজা।’
এর প্রায় দুই যুগ পরে ১৯৮১ সালে দশ ফর্মার গানের বই ‘কালনীর ঢেউ’ প্রকাশ করেন। এ বইটিতে ১৬৫টি গান ছিলো। প্রকাশক হিসেবে নাম ছিলো তাঁর পুত্র ‘নূর জালাল (বাবুল)’-এর। বইটির দাম রাখা হয়েছিল ১৫ টাকা। বইটি প্রকাশ করেন তিনি নিজের টাকায়। তাঁর নিজের কোনো টাকা পয়সা নাই, ছিলো সামান্য কিছু জমি জিরাত। তাঁর পুত্র বলেছেন যে, এই ‘কালনীর ঢেউ’ বইটি প্রকাশ করার জন্য ৬/৭ বিঘা জমি তিনি বিক্রি করেন। এ খবরটি শুনে আমার অনেক ঘটকা লেগেছিল। ৬/৭ বিঘা জমির দামতো অনেক হবার কথা। দশ ফর্মার একটা বইয়ে কতোই’বা খরচ হবে!
নূর জালাল যুক্তি দিয়েছিলেন এমন যে, তাদের ভাটি এলাকায় সেসময় জমির দামও খুব বেশী ছিলো না। জমি বিক্রির পুরো টাকা নিয়ে করিম সাহেব সিলেট চলে আসেন, মাসের পর মাস হোটেলে থাকেন সঙ্গী সাথীদের নিয়ে, খরচ হয়ে গেছে সবই। তাতেও করিম সাহেবের মনে অনেক সান্তনা ছিলো, নিজের একটা বড় বই বেরোলে তো!
‘ধলমেলা’ নামক ১৬ পৃষ্ঠার আরেকটা বই আছে শাহ আবদুল করিমের। ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ধল মেলার দিন (১লা ফাগুন) দীর্ঘ একটি কবিতা ও একটি গান আছে এই বইতে। ‘ভাটির চিঠি’ শাহ আবদুল করিমের পঞ্চম বই। ১৯৯৮ সালে এ বইটি প্রকাশ করে সিলেট স্টেশন ক্লাব। ৮৫টি গান ছিলো এ বইতে।
শাহ আবদুল করিমের সর্বশেষ বইটির নম ‘কালনীর কূলে’। ২০০১ সালে প্রকাশিত ৮৮ পৃষ্ঠার এ বইটির প্রকাশক ‘লোকচিহ্ন’। ১৯৮১ সালের পর থেকে লেখা গানগুলো এ বইতে আছে।
এর মধ্যে আবদুল করিমের অবস্থানের অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ২০০১ সালে তিনি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রিয় পুরস্কার ‘একুশে পদক’ পেয়েছেন। ‘সিটিসেল- চ্যানেল আই মিউজিক এওয়ার্ড’ এবং ‘মেরিল-প্রথম আলো’ তাঁকে আজীবন সম্মাননার পদক দিয়েছে। তাঁর গান গেয়ে হাবিব এর এলবাম ‘কায়া’ এবং ‘মায়া’ সুপারহিট হয়েছে, তাঁর জীবন নিয়ে ‘ভাটির পুরুষ’ নামে প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হয়েছে এ বছরের ১লা বৈশাখ বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে। আবদুল করিম এখন একটি না। বাংলাদেশে অবস্থিত বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী করিম সাহেবের গানের একজন ডাই-হার্ট ফ্যান, তার কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই তিনি করিম সাহেবের গান ছাড়া করতে চান না। সেসব বিচারে আবদুল করিমের নাম এখন আর ধল বা সুনামগঞ্জের ভাটি এলাকায় নেই, তিনি পরিণত হয়ে গেছেন জাতীয় চরিত্রে।
কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে করিম সাহেবের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট কোনো অসুখ তাঁর শরীরে নাই। তারপরও, তিরানব্বই বছর বয়সে তাঁর নিজের ভাষায়, ‘ইঞ্জিনে ব্যতিক্রম করে, হেন্ডিম্যান ভালো নায়রে, কখন জানি ব্রেক ফেল করে ঘটায় কী দূর্ঘটনা’ এ সময় নানা রকম অসুখ বিসুখ লেগেই আছে। সিলেটের নূর জাহান পলি ক্লিনিকে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। শুনেছি, এই ক্লিনিকের মালিক তাঁকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন, এসেছেন এই অনুষ্ঠানের জন্য।
চিকিৎসকদের উপর তাঁর আস্থা কম। তাঁর পুত্র নূর জালালকে বলেছেন তিনি, ডাক্তাররা কী করবে তার চিকিৎসা! বরং যে কয়টা দিন বাঁচি ধলগ্রামের জলমাটির সঙ্গেই যেনো থাকি। সিলেট মুখো হতে চান না। কিন্তু নূও জালাল যখন বলেন, “বাবা, তোমার সমস্ত গান নিয়ে একটা বই ছাপা হয়েছে, এটার প্রকাশনা উৎসব হবে, তখন তাঁর আগ্রহ বেড়ে যায় এবং তিনি সিলেট আসার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়েন। কাল এসে উঠেছেন হোটেলে, সেখান থেকে হাসপাতালের এম্বুলেন্স তাঁকে নিয়ে এসেছে। নামলেন স্টেচারে করে।
গত ৭ বছর ধরে দেখছি তাঁকে। মাঝখানে কিছুদিন দেখা হয়নি। বছর খানেক পরে দেখলাম শাহ আবদুল করিমকে। এক বছরে শরীর আরো ভেঙ্গেছে, ফর্সা হয়েছেন একটু বেশী। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, কোনোভাবেই স্পষ্ট করে একটা শব্দও তিনি উচ্চারণ করতে পারছেন না।
স্ট্রেচারের এক পাশ ধরে রেখেছেন ড. জাফর আহম্মেদ খান। তিনি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার এবং এই অনুষ্ঠানটির আয়োজক এবং বইটির প্রকাশকও। আয়োজনটা তিনিই করেছেন, এর জন্য তহবিল দিয়েছে ‘খা বাহাদুর এহিয়া ওয়াক্ফ এস্টেট, সিলেট। স্ট্রেচারের অপর পাশে করিমপুত্র নূর জালাল। চমৎকার একটা লাল রং এর পাঞ্জাবী পরে এসেছেন আজ। তাদের সঙ্গে আছেন শুভেন্দু ইমাম, এই রচনাসমগ্রের সংকলক ও গ্রন্থনাকারী এবং তাঁর বহুদিনের সঙ্গী পুরনো বাউল আবদুর রহমান।
করিম সাহেবকে ধরে ধরে মঞ্চে নিয়ে বসানো হলো। তিনি মঞ্চে বসে, কেমন যেনো সন্ত্রস্থের মতো ডানে বামে তাকান। কিছুক্ষণ পরপরই নূর জালাল টিসু পেপার নিয়ে এসে বাবার মুখ মুছে দিচ্ছেন। মুখ থেকে কি লালা পড়ছিলো? বোঝা গেলো না।
মঞ্চে একে একে বড় অতিথিরা এসে আসন পাতেন। এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বর্তমান সরকারের অত্যন্ত ক্ষমতাশীল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আছেন পৌরসভার মেয়র বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান অনুষ্ঠানের সভাপতি ড. জাফর আহমদ খান এবং রচনাসমগ্রের সংকলক শুভেন্দু ইমাম।
সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তন বিশিষ্ট অতিথিদের নিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ। খুব সাধারণদের দাওয়াত পাওয়ায় সুযোগ হয়নি। এসেছেন বিভিন্ন জেলার প্রশাসক উপজেলার চেয়ারম্যান, বিচারক, পদস্থ কর্মকর্তা ও কিছু সংস্কৃতিকর্মীগণ।
করিম সাহেব মঞ্চে বসার সঙ্গে সঙ্গে বেশ ক’টি ক্যামেরার ফ্লাশ লাইট আর সানগানের আলোয় তিনি ঝলসে উঠলেন।
করিম সাহেব তার জবাব দিলেন হাত উঁচিয়ে। সাধ্য থাকলে হয়তো তিনি যেভাবে সালামের ভঙ্গিতে অভিবাদন দিতেন, তা-ই করতেন। কিন্তু এখানে পারছেন না। তাঁর হাত কাঁপছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করা। খুলতেও পারছেন না। শেষ বয়সে বাকরুদ্ধ নজরুলকে যেমনটি দেখিয়েছিলো, অনেকটা সেরকমই মনে হলো আবদুল করিমকে।
অনুষ্ঠানের শুরু স্বাগতিক বক্তৃতায় ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ অত্যন্ত সাবলীলভাবে ভাটি বাংলার এই বাউলের গানগুলোর তত্ত্বকথা তুলে ধরেন। তাঁর বক্তৃতা ছিলো দীর্ঘ, কিন্তু শুনতে ক্লান্তি আসেনি।
স্বাগতিক বক্তৃতারপর মঞ্চে বসা করিম সাহেবের কাছে মাইক ধরলন বিভাগীয় কমিশনার সাহেব। তিনি মাইক ধরেই রাখলেন করিম সাহেবের মুখের কাছে কয়েক মিনিট। এর মধ্যে করিম সাহেবের মুখ থেকে কিছু ধ্বনি উচ্চারিত হয়েছিল বটে, কিন্তু সেগুলো যে কী শব্দ, তা বোঝা যায়নি। খানিক পরে মাইক টেনে নিলেন পুত্র নূর জালাল। বাবার পক্ষ থেকে কথা বললেন। বাবার স্বপ্নপূরনে যারা সাহায্য করেছেন, তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। বই ছাপানো নিয়ে বাবা অতীতে কী কী বিড়ম্বনার শিকার হয়েছিলেন, সেসবের কথাও বললেন।
এখানে বক্তৃতামালায় একটা বিষয় পরিষ্কার হলো যে, করিম সাহেবের আর কোনো গানই অগ্রন্থিত নয়। ‘আফতাব সঙ্গীত’ বইটি পাওয়া যায়নি ঠিক, ওখানে ৪০টি গান ছিলো, তবে ওসব গানতো শাহ আবদুল করিম বা তাঁর অনুসারীদের কন্ঠস্থই ছিলো। সে গানগুলো হয়তো পরবর্তীতে ‘কালনীর কূলে’তে স্থান পেয়েছে, কিংবা সরাসরি এই সমগ্রে এসেছে এ নিয়ে শাহ আবদুল করিমের মোট গানের সংখ্যা দাঁলো ৪৮০ বা তার কিছু বেশি। এর আগে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন লেখায় শাহ আবদুল করিমের লেখা গানের সংখ্যা দেড় হাজার বলে যে উল্লেখ ছিলো, তা আসলে সত্য নয়। অনুমান নির্ভর তথ্য থেকে লেখা। আমার সঙ্গে আলোচনায় শাহ আবদুল করিম নিজের গান ২-৩শ’ বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখানে যে গানগুলো সংকলিত হয়েছে তার সংখ্যা ৫শ’র একটু কম। ধরে নেয়া যায় যে, এ গানগুলোই তাঁর লেখা।
শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের একটা চমৎকার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বেশ ক’বছর ধরে। তিনি নিজে দেখা করার জন্য অসুস্থ করিমের বাড়িতে পর্যন্ত গিয়েছেন, আবার করিম সাহেবের গান নিয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধও তিনি লিখেছেন। মুহিত সাহেবের বক্তৃতাটি ছিলো বেশ আকর্ষণীয়। অত্যন্ত সহজ সরল স্বীকারোক্তি ছিলো তাঁর বক্তৃতায়। তিনি বলেন, চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে তাঁরা সিলেটে যখন সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গণে কাজ করতেন, তখন কোনোদিনও আবদুল করিম নামক কোনো বাউলের নাম শোনেননি। না শোনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, সে সময়কার যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা। দুইদিন লাগতো উজানধল থেকে সিলেট আসতে। আবদুল করিমের নামের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় ২০০১ সালে যখন তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
এসময়ই আবদুল করিমের সন্ধান করেন তিনি এবং তাঁর লেখা গানও সংগ্রহ করে শোনেন। এর পর থেকে একটা আত্মীক সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় তাঁর সঙ্গে।
এই সম্পর্ক জোরালো হয় এই কিছুদিন আগে, ২০০৫ সালে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘প্রথম আলো’ যখন তাকে আজীবন সম্মাননা দেয়, সে অনুষ্ঠানে সামনের সারির সিটে করিম সাহেব পুত্র নূর জালালকে নিয়ে চুপচাপ বসেছিলেন। দৈবাৎক্রমে মুহিত সাহেবের আসন ছিলো পাশে। তখন-ই শুরু হয় আলাপচারিতা!
মন্ত্রী মহোদয় বলেন, করিম ভাই সেদিন আমার হাত ধরে বলেছিলেন দুইটা কথা। প্রথম কথা ছিলো, আপনি আমাকে ছাড়বেন না। আর দ্বিতীয়টি ছিলো- আমি খুব গরীব। আমি তাঁর কথা শুনে বলেছিলাম- করিম ভাই, আপনি গরীব হতে যাবেন কেন, আপনি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আমি নিজেই আপনারগুণে মুগ্ধ একজন। সেই থেকেই করিম ভাইর জন্য আমি আছি।
এক সময় শেষ হয় বক্তৃতার পর্ব। শুরু হয় গান। অতিথিসহ করিম সাহেবকে মঞ্চে রেখেই গান গাইতে আসেন সিলেটের বড় বড় শিল্পীরা। এদের মধ্যে আছেন হিমাংশু বিশ্বাস, জামাল উদ্দিন হাসান বান্না, লাভলী দেব, শামীম সঙ্গে সুনামগঞ্জের বাউল আবদুর রহমান। সমবেত কন্ঠে তারা গান ধরেন- ‘গ্রামের নৌজোয়ান, হিন্দু মুসলমান…’ সেই বিখ্যাত গানটি।
কিন্তু এই গানের মাঝখানে হঠাৎ করে ছন্দ বিভ্রাট ঘটালো একটা শব্দ। গানের যে জায়গায় আছে ‘কে হবে মেম্বার কেবা গ্রাম সরকার’- এখানে হঠাৎ করে ‘গ্রাম সরকার’ থেকে ‘গ্রাম’ শব্দটা বাদ পড়ে গেলে। কারণ কি? কারণ আমার কাছে পরিস্কার। এ গানটি যখন করিম সাহেব লিখেন, তখন জিয়াউর রহমানের আমল, ‘গ্রামসরকার’ নামে একটা প্রশাসনিক পদ ছিলো ইউনিয়ন পর্যায়ে। পরবর্তী সরকার এসে এটা উঠিয়ে দেয়। সে সময় ‘গ্রাম সরকার’ ছিলো বলেই করিম তার কথা লিখেছেন। এখন এই গান শোনার সময় কেউ যদি জিয়াউর রহমানের গ্রাম সরকারের কথা মনে করে ফেলেন, তাহলে মঞ্চে উপবিষ্ট আওয়ামী সরকারের মন্ত্রীরা কি ক্ষুদ্ধ হবেন? যদি হয়ে যান? শুধুমাত্র এই কারণে ‘কে বা গ্রাম সরকার’ থেকে ‘কে বা সরকার’ হয়ে গেলো!
দু’বার গাওয়া হলো এই পঙক্তি। আমি গান দেখা বাদ দিয়ে মঞ্চে উপবিষ্টদের দেখি। অনুষ্ঠানের আয়োজক ও সভাপতি ড. জাফর আহমদ খান উসখুস করছেন। তিনি দুই তিন বার মাথা ও চোখ ঘোরালেন, যেনো কাউকে তিনি খুঁজছেন। করিম সাহেব নির্বিকার, তিনি আগাগোড়াই কোনো অভিব্যক্তির পরিবর্তন করছেন না। আদৌ ও তিনি কিছু শুনেছেন বলেও আমার মনে হলো না। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় দেখি মিট মিট করে হাসছেন, আর মাথা দোলাচ্ছেন- তার এই হাসি ও মাথা দোলানোর যে কী অর্থ, তা আমি বুঝতে পারি না। আমি তাঁকে যতটুকু জানি, মন্ত্রী না হলেও তিনি একজন শিল্প ও সাহিত্যবোদ্ধা, শিল্পের জায়গাটিতে জোর করে রাজনীতি নিয়ে আসার বিষয়টা তার পছন্দ করার কথা নয়। কিন্তু তারপরও এটা হলো। কেনো যে হলো, এটা আমি জানি না। এর আগে বা পরে, ‘গ্রাম সরকার’ পাল্টিয়ে সরকার করণের এমন ঘৃণ্যচেষ্টা আমি আর দেখিনি।
অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে করিম রচনাসমগ্র বিক্রি হচ্ছে। একটা বই কিনে আমি পাঠিয়ে দিলাম নূর জালালের কাছে, করিম সাহেবের একটা সই চাই এখানে। শাহ আবদুল করিম তাকালেন আমার দিকে। বল পয়েন্ট পেন তার হাতে ধরা। তারপরও হাত কাঁপছে। বইয়ের প্রথম খালি পাতাটিতে লিখলেন দু’টো শব্দ- ‘শাহ করিম’।
শেষ হয় অনুষ্ঠান। করিম সাহেব খুবই অসুস্থবোধ করছিলেন। তিনি চলে গেলেন অডিটরিয়াম ছেড়ে। বাদবাকী দর্শকেরা দেখলেন, ‘ভাটির পুরুষ’ প্রামাণ্যচিত্র।