বি ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে মিশর। চলছে গুলি, নির্যাতন-নীপিড়ন। রক্তে ভিজে যাচ্ছে রাজপথ। প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। সব মিলিয়ে আজকের মিশর পরিগ্রহ করেছে এক নারকীয় রূপ। জরুরি অবস্থা অমান্য করে বিক্ষোভ করেছে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি সমর্থকরা।
কায়রোসহ বিভিন্ন স্থানে করা বিক্ষোভে পুলিশ গুলি করেছে এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে। এতে অর্ধশতাধিক নিহত হয়েছে। রামসেস স্কয়ারেই নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৪১ জন। গত গত ১৬ আগষ্ট শুক্রবার মুসলিম ব্রাদারহুড ‘ক্ষোভ দিবস’ পালন করে। এদিকে জাতিসংঘ সবপক্ষকে সংযত থাকার আহবান জানিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়।
মিসরের রাজধানী কায়রোর কেন্দ্রস্থল রামসেস স্কয়ারে সমবেত হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর উপর পুলিশ গুলি এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। হেলিকপ্টার থেকে তাদের ওপর গুলি চালানো হয় বলে খবর পাওয়া যায়। এখানেই নিহত হয় ৪১ জন।
মিসরের রাজধানী কায়রোসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নতুন করে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। উত্তরাঞ্চলীয় ইসমাইলিয়া শহরে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় দামিয়েত্তা শহরে ৮ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। অ্যালেক্সজান্দ্রিয়া এবং তানতা শহরেও সহিংসতার খবর পাওয়া যায়। ১৪ আগষ্ট কায়রোসহ অন্যান্য শহরে মুরসির সমর্থকদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে প্রায় ৭শ জন নিহত হবার প্রতিবাদে ব্রাদারহুড দেশব্যপী বিক্ষোভের ডাক দেয়।
ব্রাদারহুড গত ১৬ আগষ্ট ‘ক্ষোভ দিবসের’ ডাক দেয়। কায়রোর বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার সমর্থক জরুরি আইনের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে গতকাল জুমার নামাজের পর থেকেই বিভিন্ন মসজিদ থেকে রাস্তায় নামেন। তবে কায়রোর কেন্দ্রস্থলে রামসেস স্কয়ারে যে সমাবেশ করার পরিকল্পনা ব্রাদারহুড ঘোষণা করেছিল তা নস্যাত্ করতে সামরিক-সমর্থিত সরকার পদক্ষেপ নেয়। নিরাপত্তা বাহিনী রামসেস স্কয়ারে ঢোকার সব রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে তারা ২০১১ সালের ‘আরব বসন্ত’ খ্যাত তাহরির স্কয়ারও পথচারীদের জন্য বন্ধ করে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আদলি মনসুর কায়রোর রক্তক্ষয়ী দমনাভিযান নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নিন্দা বিবৃতির সমালোচনা করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ওবামার বক্তব্যের কোনো সত্য ভিত্তি নেই। তার বক্তব্যে সহিংসতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো উৎসাহিত হবে। ওবামা ১৫ আগষ্ট মুরসি সমর্থকদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর নেয়া সহিংস পদক্ষেপের কড়া নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমরা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা জানাই।
মিসরের এ পরিস্থিতিতে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার অনুরোধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক জরুরি বৈঠক করে। বৈঠকের পর জাতিসংঘের আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মারিয়া ক্রিস্টিনা পারসেভাল বলেন, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মিসর সরকার ও মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন ও সহিংসতার অবসান ঘটানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
কায়রোতে সেনা মোতায়েন
১৬ আগষ্ট, শুক্রবার স্কয়ারে অবস্থিত ফাতেহ মসজিদে শত শত ব্রাদারহুড সমর্থক জুমার নামাজের জন্য সমবেত হয়। এর পর তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভকারীদের মূল শ্লোগান ছিল, ‘জনগণ এই সামরিক অভ্যুত্থানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়’।
অভ্যুত্থান বলতে এখানে জুলাই মাসের ৩ তারিখে প্রেসিডেন্ট মুরসির বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানকে বোঝাচ্ছে। নিজের জীবন এবং সরকারি ভবন রক্ষার্থে তাজা গুলি ব্যবহার করার জন্য পুলিশকে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
শহরের বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মুরসি বিরোধী ন্যাশনাল স্যালভেশন ফ্রন্ট এবং ‘তামারুদ’ শুক্রবার ব্রাদারহুডের ‘প্রকাশ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ প্রতিবাদে মিসরবাসীকে বিক্ষোভে নামার ডাক দেয়। সারাদেশে জনগণকে মহল্লায় মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।
গত কয়েক দিনে মিসরের বিভিন্ন জায়গায় দেশের কপটিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। এসব হামলার পেছনে ইসলামপন্থীদের দায়ী করা হচ্ছে; যারা কপটিক খ্রিষ্টানদের সামরিক অভ্যুত্থান সমর্থন করার জন্য দায়ী।
মিসরের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বলছে, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার ২৫টি গির্জা এবং খ্রিষ্টানদের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি বাড়িঘর এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়। গত ৩ জুলাই থেকে প্রেসিডেন্ট মুরসির পুনর্বহাল দাবি করে ব্রাদারহুড এবং তার মিত্র সংগঠনগুলো কায়রোর দুটি জায়গায় বিশাল অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে আসছিল।
কিন্তু ১৪ আগষ্ট রাবা আল-আদাউইয়া মসজিদের সামনে এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নাহদা স্কয়ারে অবস্থিত সমাবেশগুলো ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, সে সংঘর্ষে সারা দেশে কমপক্ষে ৬৩৮ জন মারা গেছেন। তবে ব্রাদারহুডের দাবি, নিহতের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৬শ। আহত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি লোক।
-সময়ের কথা ডেস্ক