
“এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে কানাডা ঢুকে পড়ুন তাড়াতাড়ি” লেখাটি বের হওয়ার পর অনেক অনেক ইমেইল পেয়েছি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাভাষী এমনকি কোলকাতার বাংলাভাষীদের কাছ থেকেও। অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সকলকে আমাকে এতো বেশি বেশি ইমেইল করার জন্য। অনেক ইমেইলে মনটা ভীষণ ভালো হয়ে গেছে আর অনেক ইমেইলে মন খারাপও হয়ে গেছে। অভিভূত হয়েছি – এতো মানুষ এতো মরীয়া হয়ে কানাডা আসার পথ খুঁজছেন! অনেকে ভুল বুঝেছেন- ভাবছেন, “কানাডাতে যেহেতু এতো লোক দরকার, যে কেও চাইলেই তো তাহলে কানাডা চলে আসতে পারে।” অনেকের ভীষণ মন খারাপ করা প্রশ্ন ” এক্সপ্রেস এন্ট্রি ছাড়া অন্য আর কি কোনো পথই নেই?”- আমাকে আজকের এই লেখা লিখতে উদবুদ্ধ করেছে। হাঁ, এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে কানাডা চলে আসা যায় সবচেয়ে কম সময়ে এবং সবচেয়ে দ্রুত গতিতে। আর একটু ধীর গতিতে প্রভিন্সিয়াল নমিনী নিয়ে অনেকেই কানাডা চলে এসেছেন এবং এখনো আসছেন। একমাত্র কুইবেক ছাড়া কানাডার বাকি দশটি প্রভিন্স এবং তিনটি টেরিটোরিতেই পিএনপি প্রোগ্রাম চালু আছে। কুইবেকের জন্য কুইবেক সিলেকশন সার্টিফিকেট বা সিএসকুই দরকার হয়।
পিএনপি দুই ধরণের হয়- এনহ্যানচেড এবং বেস। এক্সপ্রেস এন্ট্রি পুলে যাঁরা অলরেডি আছেন, কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে ITA পাচ্ছেন না, তারা এনহ্যানচেড পিএনপির আবেদন করে CRS স্কোর বাড়িয়ে খুব সহজেই ITA পেতে পারেন। যারা এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে ঢুকতে পারছেন না, তাঁরা বেস পিএনপির জন্য আবেদন করে নোমিনেশন পেতে পারেন।আর এই নোমিনেশনের মাধ্যমেই PR হিসাবে পরিবার পরিজন নিয়ে কানাডা চলে আসতে পারেন।
মার্চ ১৭, ২০১৭ সাল থেকে নতুন চালু হওয়া আটলান্টিক পাইলট ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে কানাডার মেরিটাইম খ্যাত নোভাস্কোশিয়া, নিউব্র্যান্সউইক, নিউফাউন্ডল্যান্ড এন্ড ল্যাব্রাডোর এবং প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ডে ২,০০০ নিউকামার এবং তাঁদের পরিবারকে কানাডায় নিয়ে আসতে শুরু করেছে। তিন বছর মেয়াদী এই পাইলট প্রোগ্রামের মাধ্যমে কানাডার পূর্বাঞ্চলের আটলান্টিক তীরের চারটি প্রদেশ ফেডারেল গভমেন্টের সঙ্গে একীভূত হয়ে ঐসব প্রদেশে অভিবাসী আনা শুরু করেছে। আর এটি মূলত এমপ্লয়ার ড্রিভেন প্রোগ্রাম। কেবলমাত্র কানাডার ঐসব প্রভিন্সিয়াল এবং টেরিটোরিয়াল সরকার মনোনীত এমপ্লয়াররাই কোনো এলএমআইএ ছাড়াই ইমিগ্র্যান্ট নিয়ে আসতে পারছে। এক্ষেত্রে কানাডায় পড়াশুনা করা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। তবে সাবধান- কেও প্রতারণার অভিনব সব ফাঁদে পা দেবেন না। অনেকেই বিপুল পরিমান অর্থের বিনিময়ে কানাডার জব অফার কিনছেন বা কিনেছেন: যা দিয়ে আসলে কোনোদিনও ইমিগ্রেশন হবে না। গ্রহণযোগ্য জব অফার এতো সহজসাধ্য নয় যে কেবল পয়সা হলেই তা কেনা যাবে। কার্যকরী জব অফার একমাত্র কানাডিয়ান ফেডারেল এবং প্রভিন্সিয়াল গভর্নমেন্ট মনোনীত এমপ্লয়াররাই দিতে পারে। কাজেই- সাবধান, কানাডিয়ান জব অফার এর নামে প্রতারণার ফাঁদে কোনোভাবেই পা দেবেন না। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, বহু কানাডিয়ান স্কীলড সিটিজেন এবং পার্মানেন্ট রেসিডেন্টরাই তাঁদের মনমতো জব পাচ্ছে না আর আপনাকে কেন এতো ভালো ভালো জব অফার করবে? প্রশ্ন করবেন নিজেকে- আপনি কে? আপনার শিক্ষাগত, ভাষাগত এবং কাজের অভিজ্ঞতা কি কানাডায় অকুপেশন ইন ডিমান্ড লিস্টে আছে? থাকলে কোন ক্যাটেগরিতে এবং কোন প্রভিন্সে ? তাহলে পয়সা দিয়ে জব অফার কিনবো কেন? স্কীলড ইমিগ্র্যান্ট হিসাবে আবেদন করি।
কানাডায় ইমিগ্র্যান্ট হিসাবে আসার আর একটি সহজ দরজা গভর্নমেন্ট সম্প্রতি খুলে দিয়েছে। আগে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের PR এপ্লিকেশন করতে হলে গ্রাডুয়েশনের পর কানাডা ছেড়ে যেতে হতো। কিন্তু এখন তাঁরা কমপক্ষে ২ বছরের ডেসিগনেটেড লার্নিং ইনস্টিটিউট এর ডিপ্লোমা করলে পোস্টগ্রাজুয়েট ওয়ার্ক পার্মিট এর আবেদন করতে পারে। পোস্ট গ্রাজুয়েট ওয়ার্ক পার্মিট সর্বোচ তিন বছরের হতে পারে। স্টুডেন্ট অবস্থায় তারা বৈধ ভাবে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা কমপক্ষে এক বছরের (৩০ ঘন্টা পার উইক) কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে কোনো জব অফার ছাড়াই এক্সট্রা পয়েন্টস নিয়ে কানাডিয়ান এক্সপেরিয়েন্স ক্লাস এর আওতায় কানাডা থেকেই পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়ার আবেদন করতে পারে। তাদের যদি কানাডায় আপন ভাই বা বোন থাকে তাহলেও তারা অতিরিক্ত পয়েন্টস পাবে। তাঁরা যদি ফ্রেঞ্চ ল্যাঙ্গুয়েজে জানে তবে তার জন্যেও এক্সট্রা পয়েন্টস আছে।
২৮শে আগস্ট, ২০১৭ প্যাটী হাজুদ, কানাডার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী পোস্টসেকেন্ডারি শিক্ষার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন ডলারের বাজেট ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১০,০০০ পেইড স্টুডেন্ট ওয়ার্ক প্লেসমেন্ট এর ব্যবস্থা থাকবে। এপ্রকল্পে এমপ্লয়াররাও সরকারকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এইপ্রকল্পের উদ্দেশ্য একটাই যেন পোস্টসেকেন্ডারি স্টুডেন্টরাই যাদের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরাও আছে অকুপেশন ইন ডিমান্ড লিস্টের চাকরি পেতে পারে; এবং তাতে করে অন্য দেশ থেকে স্কীলড ইমিগ্র্যান্ট আনার দরকার হবে না।
ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসাবে আসার সময় অবশ্যই খুব সতর্ক থাকবেন প্রাইভেট ইনস্টিটিউশন যারা ডিগ্রী (ব্যাচেলর, মাস্টার্স বা ডক্টরেট ) দিতে পারে না, সেখান থেকে পাশ করলে পোস্টগ্রাজুয়েট ওয়ার্ক পার্মিট (সর্বোচ্চ ৩ বছর) পাওয়া যাবে না। কাজেই পড়ালেখা করার জন্য সঠিক ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হবেন যা আপনাকে পরবর্তীতে PR এর আবেদনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আশা করি আজ কারো কারো মন একটু হলেও ভালো করতে পেরেছি, কিছুটা হলেও আশা জাগাতে পেরেছি। ভগ্ন হৃদয় খানিকটা হলেও জোড়া দিতে পেরেছি। আজ এটুকুই থাক তাহলে বাকি কথা পরে হবে। অনেক ভালো থাকুন এবং ভালো রাখুন সবাইকে। নিরন্তর শুভেচ্ছা আপনাদের সবাইকে।
-মাহমুদা নাসরিন, রেগুলেটেড কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট এন্ড কমিশনার অফ অথস, ক্যানবাংলা ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস nasrinmahmuda8@gmail.com