মায়ের চিঠি

মায়ের চিঠি

মা

চিঠিটা ফেসবুক থেকে নেয়া। দিন কয়েক আগে ফেসবুকে তা পোষ্ট করার পর পরই ব্যাপক আলোচনায় স্থান পায় তা। মায়ের চিটি ও ছবি ছাপা হলেও সেখানে ছিলো না তাঁর নাম ও ঠিকানা। আমরাও মনে করি নাম ঠিকানা এখানে মূখ্য নয়; এখানে মুখ্য বিষয় হচ্ছে, বয়োবৃদ্ধ হবার অপরাধে নিজ সন্তানের সংসার থেকে বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই পাওয়া এক মায়ের হৃদয়ের কাঁকুতি। জানি এ চিঠিটা লেখার সময় মায়ের হাতটা কাঁপছিলো; একই সাথে হয়তো বারবার ভিজে যাচ্ছিলো তাঁর দু’চোখ। আজ মায়ের সে চিটিটা পড়ার পর যেমন  হৃদয়ধারীদের হৃদয় দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে।

এক বৃদ্ধ মা বৃদ্ধাশ্রম থেকে সন্তানের কাছে চিঠিটি লিখে নিজের কাঁকুতিই শুধু প্রকাশ করেননি, সেই সাথে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন, দিনে দিনে আমাদের মানবতা কতোটা লোপ পাচ্ছে! এটাই কি সাম্প্রতিককালের সভ্যতা?

 

নিচে চিটিটা তু‌লে ধরা হলো :

 খোকা তুই কেমন আছিস? বউমা আর আমাদের ছোটো দাদুভাই সবাই ভালো আছে তো? জানি তোদের তিন জনের ছোটো সংসারে প্রত্যেকেরই খুব কাজ। তবুও তোদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ। একদিন একটু সময় করে এই বুড়ি মাকে দেখতে আয় না ! কিরে, আসবি না?

বাবা আমাকে যেদিন বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলি, সেদিন ঝগড়া করেছিলাম বৃদ্ধাশ্রম থেকে আমাকে নিতে আসা লোকজনদের সঙ্গে। কারণ আমি তোর সঙ্গে দেখা করে আসার জন্য তাদের কাছে সময় চেয়েছিলাম, তারা সময় দিলেও শেষ পর্যন্ত তুই আসিস নি। তুই কাজে এত ব্যস্ত থাকিস তখন আমার মনে ছিলনা। পরে মনে পড়েছিল, তাই তোর সঙ্গে দেখা না করেই চলে এসেছি। তুই রাগ করিসনি তো?

ওঃ বুঝতে পেরেছি ! এখনো আমার উপর থেকে অভিমান যায় নি বুঝি ! জানি শেষ দিনটাতে একটু বেশি রকমেরই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম, তাছাড়া আর কিইবা আমি করব বল, সময় মতো ওরা এসে আমার জিনিসপত্র সব জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে নিল, তারপর বারবার তাগদা দিতে লাগল।কিন্তু আমি তবুও তোর আসবার অপেক্ষায় বুক বেঁধে ছিলাম । আমি তোকে জন্ম দিয়েছি। জল-আগুন-অসুখ থেকে তোকে এতগুলো বছর বাঁচিয়ে রেখেছি। তাই যাবার আগে আমাকে কি তুই না দেখে থাকতে পারবি? কিন্তু তুই এলি না !

আর সেদিন আমার সেই জেদ দেখে বউমা তো রেগেই আগুন। তাছাড়া তার তো রাগবারই কথা!

আমাকে নিয়ে যেতে যারা এসেছিলো, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা যা তড়িঘড়ি শুরু করে দিল…

তা দেখবার জন্য পাশের বাড়ি থেকে কেউ কেউ উঁকি দিতে লাগল।

সেদিন তোদের যে অপমান করে এসেছি তোরা সেসব ভুলে যাস কেমন করে ! আমার কথা ভাবিস না। আমি খুব ভালো আছি ! আর কেনই-বা ভালো থাকবনা বল ? তোরা তো আমার ভালো থাকবারই বন্ধবস্ত করে দিয়েছিস। আর সেদিন থেকে আমি বুঝতে পেরেছি আমাকে এখানে পাঠিয়ে তোরা বেঁচে গেছিস। তবে একটা কথা, আমার কথা যদি তোর কখনো-কোনোদিন মনে পড়ে ;তখন যেন নিজেকে তুই শেষ করে দিস না। তুই এখনো একশ বছর বেঁচে থাক ।

আমি তো মা, তোর জন্য কত সয়েছি ! এরপরেও সয়ে যাবো।

 

 

সময়ের কথায় প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Facebook fan page

Leave a Reply

Your email address will not be published.