লিখেছেন জাহিদুল আলম জয়
ক্রিকেট ইতিহাসের প্রায় সব গৌরবোজ্জ্বল রেকর্ডের মালিক শচীন টেন্ডুলকর। ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতে পূরণ করেন পরম আরাধ্য স্বপ্নসাধ। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেই বিদায় জানাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। কিন্তু দুরন্ত, দুর্বার লিটলমাস্টার সেখানেই থামিয়ে দেননি নিজের পথচলা। অবিরাম গতিতে চললেন এবং বগলদাবা করলেন আরও কিছু রেকর্ড। কিন্তু ২০১২ সালে কেমন যেন ম্রিয়মাণ লাগছিল ভারতীয় ক্রিকেটঈশ্বরকে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাটিতে টেস্ট সিরিজে ব্যাট হাতে নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দেন। এরপর থেকেই আলোচনায় উঠে আসে শচীনের অবসর প্রসঙ্গ। নানাদিক থেকে ধেয়ে আসতে থাকে বিতর্কের ঢেউ! এমন দুঃসময়ে অনেকেই পাশে ছিলেন মাস্টার ব্লাস্টারের। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজের দল থেকে বাদ পড়ার গুঞ্জনও চাউর হতে থাকে। এমন গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে, প্রথমবারের মতো দল থেকে শচীনকে বাদ দিতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। যে শচীন ক্রিকেটকে দিয়েছেন দু’হাত ভরে, তাঁকেই কি না এমন সঙ্কটময় ও অনাকাংখিত পরিস্থিতিতে পড়তে হবে! ভারতীয় নির্বাচকদেরও নিশ্চয়ই বুক কেঁপে উঠত এমন সিদ্ধান্ত নিতে। কিন্তু না, অতিমানব শচীন কাউকে বিড়ম্বনার সুযোগ দেননি। সমস্ত জল্পনা-কল্পনা আর আলোচনা-সমালোচনার ইতি টেনে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ক্রিকেট কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকর। রবিবার ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই) শচীনের অবসরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রঙিন পোশাকে ক্রিকেট না খেললেও সাদা পোশাকে টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন ৩৯ বছর বয়সী শচীন।
মুম্বাইয়ের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণকারী শচীনের নাম রাখা হয় বিখ্যাত সুরকার শচীন দেব বর্মণের নামানুসারে। ছোটবেলায় বড়ভাই অজিত ছিলেন তাঁর কোচ। এরপর রামাকান্ত আর্চরেকারের হাত ধরে শচীনের এগিয়ে যাওয়া শুরু। ১৯৮৩ সালে ভারত বিশ্বকাপ জয়ের পর টেন্ডুলকর ১৯৮৬ সালে চেন্নাইয়ের এমআরএফ পেস বোলিং একাডেমীতে গতি দানব হওয়ার স্বপ্নে প্রশিক্ষণ নিতে যান। কিন্তু এমআরএফের তৎকালীন অসি কোচ ডেনিস লিলি তার উচ্চতা দেখে ফিরিয়ে দেন এবং বলেন ব্যাটিংয়ের প্রতি মনযোগী হও। এরপরই মূলত ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ করেন পুঁচকে ছেলে শচীন। যার ফল কী হয়েছে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রিকেট ব্যাটিংয়ের সব গৌরবময় রেকর্ডই শচীনের পদতলে আঁচড়ে পড়েছে। যেদিকে দু’চোখ মেলে তাকানোর দুঃসাহস হয়ত কারও নেই! নিজের রেকর্ডকে সীমাহীন উচ্চতায় রেখে অবশেষে শচীন পথচলা শেষ করলেন ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে।
এদিকে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে শচীন টেন্ডুলকারের হঠাৎ অবসর নেয়ার কারণ খুঁজতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারতীয় মিডিয়া। মনগড়া গল্পও লেখা হচ্ছে। ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসন নাকি পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে শচীনের খেলার বিরুদ্ধে ছিলেন। সে কথা তিনি নির্বাচকদের জানিয়ে দিয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচক সন্দীপ পাতিল সে কথা মিডিয়ায় ফাঁস করে দেন। এরপরই নাটকীয়ভাবে পটপরিবর্তন হয়। বিয়োগান্তক পরিণতির দিকে এগোয় সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার। টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবশ্য নিজেকে সরিয়ে নেননি টেন্ডুলকার। তার সাবেক সতীর্থ অনিল কুম্বলের ধারণা, শচীনকে ২০০তম টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ দেবে ভারতীয় বোর্ড। বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এ প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরই শচীন তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শচীনের হঠাৎ করে অবসর নেবার পেছনে থাকতে পারে আরো কারণ, আর কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার অপেক্ষাও করছেন অনেকে।