![স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষে হকিং স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষে হকিং](https://somoyerkotha.com/wp-content/themes/stylebook/timthumb.php?src=https%3A%2F%2Fsomoyerkotha.com%2Fwp-content%2Fuploads%2F2013%2F09%2Fjjjj.png&q=90&w=795&zc=1)
কেউ কি চায় এ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে স্বেচ্ছায় চলে যেতে? হয়তো চায়। আর তারাই চায়, যাদের অনেকেই রোগ-যন্ত্রণার অসহ্যময় ঘানি টেনে বেড়াচ্ছেন বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে।
শুধু অসুস্থতার কথাই বা বলছি কেনো, কখনো কখনো কারো কারো জীবনে এমন সময় বা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন বেঁচে থাকাটাই অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। সেই অভিশাপ থেকে তখন পরিত্রাণ পেতে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করেন। আর এ ধরনের আত্মহত্যায় সহায়তার প্রতিই সমর্থন জানিয়েছেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। চলতি সপ্তাহে তার কর্ম ও জীবনভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র মুক্তি উপলক্ষে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রখ্যাত ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছেন, ব্যক্তির নিজের ইচ্ছায় মৃত্যুবরণের অধিকারকে সমর্থন করেন তিনি। তবে তা শুধু এমন পরিস্থিতিতেই হতে হবে, যখন ওই ব্যক্তির জীবনধারণ অসহনীয় হয়ে পড়বে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স গত ১৭ সেপ্টেম্বর জানায়, সম্প্রতি নিজের কর্ম ও জীবনভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্রের মুক্তি উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যে হকিং এসব কথা বলেন। ‘হকিং’ নামের প্রামাণ্যচিত্রটি আগামীকাল শুক্রবার যুক্তরাজ্যে মুক্তির পাওয়ার কথা।
মাত্র ২১ বছর বয়সে দূরারোগ্য মটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হন হকিং। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তিনি বড়জোর আর দুই থেকে তিন বছর বাঁচবেন। কিন্তু চিকিৎসকদের ভবিষ্যদ্বাণীকে ব্যর্থ করে তিনি বেঁচে আছেন। এখন তাঁর ৭১ বছর। অবশ্য দীর্ঘসময় ধরেই হুইল চেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না তিনি।
হকিং বলেন, ‘আমি মনে করি, যাঁরা আরোগ্যের অতীত কোনো রোগে আক্রান্ত এবং জীবনধারণ অসহনীয় হয়ে পড়েছেন, সেক্ষেত্রে তাঁদের জীবনাবসানের সুযোগ দেওয়া উচিৎ। যিনি বা যাঁরা ওই রোগীর মৃত্যুতে সহায়তা করবেন, তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন। তবে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যে, ওই রোগী সত্যিকার অর্থেই তাঁর মৃত্যু চান। এ ব্যাপারে তাঁকে কোনো চাপ দেওয়া বা বাধ্য করা হচ্ছে না। তাঁর অজ্ঞাতে বা অসম্মতিতে কিছু ঘটবে না, যেমনটি আমার ক্ষেত্রে ঘটেছিল।’
‘হকিং’ প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধন
হকিং পরকালকে ‘রূপকথা’ বলেই মনে করেন
দীর্ঘকাল ধরেই মানুষ মৃত্যুপরবর্তী জীবন রয়েছে বলে বিশ্বাস করে আসছে। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থও মানুষের এই ধারণায় উৎসাহ জুগিয়েছে। কিন্তু সেই ধারণাকে অস্বীকার করেছেন বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানীস্টিফেন হকিং। তিনি পরকালকে রূপকথা বলেই মনে করেন। হকিং জানান, পরকাল বলে কিছু নেই এই ধারণা থেকেই নিজের পক্ষাঘাতগ্রস্ত শরীরের বিরুদ্ধে সারা জীবন লড়াই করে গেছেন তিনি।
১৯ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে নিয়ে নির্মিত ‘হকিং’ নামের একটি প্রামাণ্যচিত্রের উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন হকিং। প্রামাণ্যচিত্রটির চিত্রনাট্য হকিংয়ের নিজের লেখা এবং এর ধারাবর্ণনাও তিনি নিজেই দিয়েছেন। ৭১ বছর বয়সী এ বিজ্ঞানী বিশ্ব সৃষ্টি ও ভৌত-প্রাকৃতিক নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা শীর্ষ বিক্রিত বই “অ্যা ব্রিফ হিস্টরি অফ টাইম” (কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস)-এর লেখক।
“সারা জীবন অকাল মৃত্যুর হুমকির মধ্যে আমি জীবনযাপন করেছি, তাই সময় নষ্ট করাকে আমি ঘৃণা করি,” বলেন তিনি। পক্ষঘাতগ্রস্ত শরীর নিয়ে তার জীবন কাটে হুইল চেয়ারে। কথাও বলতে পারেন না তিনি। মুখের পেশির নড়াচড়ার মাধ্যমে কম্পিউটারে তৈরি করা স্বরে কথা বলেন হকিং।
একটি চোখের অর্থপূর্ণ নড়াচড়া সেই কথাকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। ‘হকিং’ প্রামাণ্যচিত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এই তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী জানিয়েছেন, মৃত্যুতে ভয় পান না তিনি। প্রামাণ্যচিত্রটির প্রদর্শনী শেষে উপস্থিত দর্শকদের তিনি বলেন, অন্ধকারকে ভয় পায় এমন মানুষদের বানানো রূপকথা হল পরকাল। “আমি মনে করি মস্তিষ্ক কম্পিউটারের মতোই মনের একটি কর্মসূচি (প্রোগাম), তাই তাত্ত্বিকভাবে কম্পিউটারে মস্তিষ্কের প্রতিলিপি তৈরি করা সম্ভব, আর এভাবে মৃত্যুর পরেও একটি জীবনকে ধরে রাখা যায়।” “তবে এখনও পর্যন্ত এটি আমাদের আয়ুষ্কাল ও সামর্থ্যের বাইরে আছে।” বলেন তিনি।
-সময়ের কথা ডেস্ক