কাজী এনায়েত উল্লাহ। ঢাকার বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির ঐতিহ্যবাহী চেয়ারম্যান পরিবারের কৃতী সন্তান এই মেধাবী বাঙালী ১৯৭৮ সাল থেকে বসবাস করছেন ফ্রান্সের রাজধানীতে। সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি। পড়াশোনার ফাঁকেই জব এবং তা থেকেই সঞ্চয়, মনোনিবেশ ব্যবসায়। নিরলস পরিশ্রম আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে এক সময় প্রতিষ্ঠা করেন বনানী গ্রুপ। রেস্টুরেন্ট, রিয়েল এস্টেট ও এয়ারলাইন্স ব্যবসার কল্যাণে কাজী এনায়েত উল্লাহ আজ ইউরোপের একজন বিজনেস ম্যাগনেট…..তাকে নিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি তৈরী করে পাঠিয়েছেন সময়ের কথা’র ইউরোপ প্রতিনিধি মাঈনুল ইসলাম নাসিম
অত্যন্ত বিনয়ী, সদালাপী কাজী এনায়েত ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনোমিক চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ স্লোগানে চলতি বছরের শুরুতে প্যারিস-ঢাকায় একযোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ বিজনেস কনসালটিং (বিবিসি)। উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজের ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের জিএসএ কাজী এনায়েত উল্লাহ ফ্রান্স-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় মুক্তি পাওয়া সাড়াজাগানো চলচ্চিত্র লালটিপের সফল প্রযোজক। শত ব্যস্ততা সত্বেও প্যারিসের যে কোন সামাজিক-সাংস্কৃতিক আয়োজনে তার ভূমিকা প্রসংশনীয়। তার প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতি বছর ফ্রান্সের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী বাংলার মেলা, যা ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশীদের অন্যতম বিগ ইভেন্ট হিসেবে নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। ইউরোপে বাংলাদেশ কমিউনিটির কল্যাণ আর প্রবাসীদের সফল অংশগ্রহনে বাংলাদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজী এনায়েত উল্লাহ আজ ফ্রান্সের সীমানা পেরিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউরোপ জুড়ে কমিউনিটির অগ্রযাত্রায়। ইউরোপের ৩০ টি দেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সম্মিলিত সংগঠন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)’র সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
গত ৩ আগষ্ট বাংলাদেশ বিজনেস কনসালটিং (বিবিসি) ও অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)’র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে সময়ের কথা’র সাথে খোলামেলা কথা বলেন কাজী এনায়েত উল্লাহ।
বাংলাদেশের যেসব ব্যবসায়ী ইউরোপে পন্য রফতানী করে থাকেন আর যেসব ইউরোপিয়ান ব্যবসায়ী বাংলাদেশ থেকে পন্য আমদানী করেন, তাদের মধ্যে সংযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়িক বিশেষ পরিবেশ সৃষ্টি করাই বাংলাদেশ বিজনেস কনসালটিং প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য বলে জানান কাজী এনায়েত। তিনি বলেন, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যথাক্রমে প্যারিসের একটি অভিজাত এলাকায় এবং ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে উদ্বোধন হয় বিবিসি’র স্থায়ী অফিস। ঢাকায় একই সময় ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজন করা হয় সেমিনার, যাতে যোগ দেন ড্যানিশ রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদ ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও প্রতিনিধিরা। কাজী এনায়েত উল্লাহ জানালেন, যাত্রা শুরুর পর থেকে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন। ইউরোপের পাশাপাশি পশ্চিম ও উত্তর আফ্রিকাতেও বাংলাদেশের বাজার সম্প্রসারণে আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমাদের বিবিসি এক্সপার্ট গ্রুপে আছেন লিগ্যাল, কমার্শিয়াল, ফাইনান্সিয়াল এমনকি ডিটেক্টিভ এক্সপার্ট লোকজন। তিনি বলেন, ডিটেক্টিভ এক্সপার্টদের কাজ হচ্ছে ইউরোপের যেসব ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বানিজ্য করতে চান, তাদের বিষয়ে যে কোন বিশেষ তথ্যাদি বাংলাদেশের রফতানীকারকদের অবহিত করা, কারণ আমরা চাই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক স্থাপন করতে। বাংলাদেশ ও ইউরোপের ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বানিজ্য করবেন তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ বিজনেস কনসালটিং (বিবিসি)। আর বাংলাদেশের মোট রফতানীর ৫২ শতাংশ যেহেতু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে হয়ে থাকে সেজন্য যাতে আমরা আরো সহজে ব্র্যান্ডিং এন্ড মার্কেটিং নিশ্চিত করতে পারি, সেজন্য বিবিসি ব্যাপক পরিসরে কাজ শুরু করেছে। এতে করে আমরা আমাদের আমদানী-রফতানীর প্রচার-প্রসারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য ব্যাপক ভিত্তিক কর্মসংস্থান তথা কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে আমি আশাবাদী।
বিবিসি ডিরেক্টর জেনারেল কাজী এনায়েত উল্লাহ মনে করেন, এই অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সবার আগে প্রয়োজন বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা যাতে একটু দেশপ্রেমিকের মতো আচরণ করেন এবং দেশের সার্বিক স্বার্থ সংরক্ষণে সহায়তা করেন, এমনটা আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আপনারা দেশকে ভালোবাসুন, দেশের মানুষকে ভালোবাসুন। আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আপনাদের সিদ্ধান্তের উপর। সাউথ ইস্ট এশিয়াতে আমরা যাতে আমাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে পারি, আপনাদের ভুলের জন্য যাতে সেই সুযোগটি অন্য কেউ না নিয়ে নেয়।
কাজী এনায়েত উল্লাহ বলেন, একমাত্র অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমেই আমরা সমস্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারবো। অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমেই আমরা সেইসব বীর শহীদদের আত্মার প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করতে পারবো, যাঁরা একাত্তরের সেউ উত্তাল দিনগুলোতে অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
কাজী এনায়েত উল্লাহ আয়েবা’রও সেক্রেটারি জেনারেল। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা) ইতিমধ্যে ইউরোপে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভালোলাগা আর ভালোবাসার সংগঠনে পরিনত হতে চলেছে। আয়েবা প্রতিষ্ঠার পটভূমি বর্ননা করে সময়ের কথাকে কাজী এনায়েত জানান, ইউরোপের দেশে দেশে যেসব বাংলাদেশী কমিউনিটি রয়েছে, তাদের মধ্যে সুন্দর সমন্বয়ের মাধ্যমে পারষ্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টির পাশাপাশি দেশে-বিদেশে তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির জন্য যা যা করনীয়, তা সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে কর্মে বাস্তবায়িত করার জন্যই আয়েবার আত্মপ্রকাশ। যদিও এটি একটি সম্পূর্ন অরাজনৈতিক সংগঠন তথাপি যে কোন রাজনৈতিক মতাবলম্বি তথা উদারমনা যে কেউ আমাদের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারেন। আয়েবার মাধ্যমে আমরা ইউরোপের বাংলাদেশ কমিউনিটির সমস্ত শক্তি এক করতে সক্ষম হবো এবং এই এক করার মাধ্যমে তা কাজে লাগানো হবে বাংলাদেশের কল্যানে। বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটাধিকার, বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের কোটাভিত্তিক আসন সংরক্ষণ তথা প্রতিনিধিত্ব, বিশ্বের প্রতিটি বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনে প্রবাসী কল্যান ডেস্ক স্থাপন, বাংলাদেশের ভূখন্ডের ভেতর প্রবাসীদের পরিবার-পরিজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবাসীদের বিশেষ প্রায়োরিটি প্রদানের মতো ন্যায্য সব দাবী দাওয়া বাস্তবায়নে অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ এসোসিয়েশন (আয়েবা)’র চলমান সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল কাজী এনায়েত উল্লাহ। আক্ষেপ করে সময়ের কথাকে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিভেদ আমাদের এক ঐতিহাসিক সমস্যা, যা কিনা আজ দেশের সীমানা পেরিয়ে প্রবাসেও কমিউনিটির অগ্রযাত্রায় অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। রাজনৈতিক মতভেদ থাকতেই পারে, তবে প্রবাসে বাংলাদেশ কেন্দ্রিক রাজনৈতিক মতবিরোধ দেশ ও জাতির জন্য কোন দিনই কোন কল্যান বয়ে আনেনি, বরং মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন দেশে বিনষ্ট হয়েছে দেশের সুনাম।