
বিশ্বকাপ ফুটবল বরাবরের মতোই মাতিয়ে রেখেছে পুরো বিশ্বকে এবং পুরো বাংলাদেশকে।একটা মাস যেনো পালে হাওয়া লাগিয়ে ফুটবল ভেলায় ভেসে চললো বাংলাদেশ।নাওয়া খাওয়া ভুলে সমর্থিত দলের সমর্থনে বুদ হয়ে বিশ্বকাপ উপভোগে কোনোই ঘাটতি ছিলো না দেশের কোটি ভক্ত অনুরাগীর।
চার বছর পর বিশ্বকাপের আসর,এবারের এই আসর বসেছিলো আমাদেরই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। এবং করোনা পরবর্তী এতো বড়ো উন্মাদনা উত্তেজনার আবহ-সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য সময় অতিক্রম করছে দেশের মানুষ। সেই সাথে প্রিয় দলকে ঘিরে উত্তেজনা থেকে হাতাহাতি,উন্মাদনার অতিরিক্ততায় মৃত্যুর ঘটনা ও ঘটেছে।সবই ফুটবলকে ভালোবেসে।হোক না দূরের কোনো দেশ কিন্তু সে তো প্রাণের,গভীর ভালোবাসার ফুটবল । স্টার, সুপারস্টারদের নিয়ে -উন্মাদনা মেসি,নেইমার,রোনালদো,এমবাপ্পে তো ছিলোই,কত নতুন মন জয় করে নিয়েছে এবার,নিশ্চিতই আগামীর স্বপ্ন হবে তাদেরকে ঘিরে ।আগামীর সুপারস্টার তো তারাই হবে।তবে অবধারিত ভাবে ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, জার্মানী,স্পেন,বেলজিয়াম চিরকালীন এই ভালোবাসাগুলো তো থাকবেই সাথে নতুন করে এবার মন কেঁড়েছে অবশ্যই মরক্কো,ক্রোয়েশিয়া,জাপান এবং দারুণ অঘটনের বিশ্বকাপ কাতারের আয়োজনের ২২’এর এই আসর।

বিশ্বকাপ প্রায় শেষের দিকে । হিসেব-নিকেষ নিয়ে এখন ব্যস্ত হবে নিশ্চয়ই অংশগ্রহণকারী দলগুলো ,আয়োজনের দেশ কাতারও বটে! ফিফা প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যেই কাতার বিশ্বকাপকে ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপের খেতাব দিয়ে ও দিয়েছেন,যখন এখনও ফাইনালের চুড়ান্ত লড়াইটা বাকী রয়ে গেছে। কিন্তু আসর সেরা আয়োজনের সম্মান উঠে গেছে কাতারের মাথায় মুকুট হয়ে।ফুটবল দ্যূতিময় সত্যি, চার বছর অন্তর যে আলো ছড়িয়ে যায়,সারা বিশ্ব তাতেই আন্দোলিত, আবেগতাড়িত হয় আগামী চার বছরের জন্য ।আর বাংলাদেশ বরাবরই সমস্ত বিশ্বকাপেই সেরাদের সেরা—সমর্থনে,আবেগে,উন্মাদনায়, উচ্ছলতায়।এই বিশ্বকাপে সেটা যেনো মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। খোদ বিশ্ব ফুটবল সংস্থা ও উদ্বেলিত বাংলাদেশের কোটি ফুটবল পাগল মানুষের ভালোবাসায়।আর্জেন্টিনা সরকার নতুন করে দূতাবাস খুলতে চাইছে তাদের সমর্থিত ফুটবল প্রিয় এই দেশটাতে।
ভাবা যায়!
কিন্তু ফুটবল নিয়ে এতো ব্যস্ততা এতো উন্মাদনার মাঝে আক্ষেপ কী হয় না………আমাদের ফুটবল কোথায়? আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল সমর্থকদের সংঘর্ষে মানুষ মারা পড়ছে,ফিফা বিস্মিত হয়ে ফুটবল পাগল বলছে যে দেশকে কিংবা বাংলাদেশের অগনিত মানুষ আর্জেন্টিনাকে গভীর ভালোবাসায় সমর্থণ দিচ্ছে, তাই আমাদের ক্রিকেট যখন ভারত বধ করলো তখন আনন্দে আর্জেন্টাইনরা উচ্ছসিত হয়ে দেখেছে সেই খেলা।
কিন্তু এই সবে আমাদের ফুটবল কোথায়?ভীষণ বর্ণাঢ্য অতীত আছে আমাদের ফুটবলের কিন্তু দুঃখজনক সত্যিটা হলো, সাফ ফুটবলের কাছেও ঘেঁষতে পারছেনা এখন বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দল। অবশ্য মহিলা ফুটবল দল বর্তমান সাফ চ্যাম্পিয়ন দল।কিছুদিন আগে গৌরবের সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপ তারা জয়ও করেছে বাংলাদেশকে সম্মানিত করে কিন্তু পুরুষ ফুটবল দলটা কোনো ভাবেই প্রদীপের আলোয় আসতে পারছে না কেনো যেনো ।বারবার কোচ পরিবর্তন করে, নতুন নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা,কিংবা বহু পরিকল্পনা করে ও ফুটবল সাফল্য কোনোভাবেই ধরা দিচ্ছে না। আগে নেপাল ভুটানের মতো দলগুলোকে অবলীলায় হারিয়ে দিতে পারতো বাংলাদেশ দল।অথচ এখন এই দলগুলোর সাথেই আর জয়ী হতে পারে না বাংলাদেশ দল। আমাদের সোনালী ফুটবল ইতিহাসে এদেশের খেলোয়াড়রা বাইরের দেশে যেয়ে তাদের হয়ে লীগ খেলে এসেছে সগৌরবে অথচ এখন আমাদের ফুটবলে নেই সেই সুদিন। কেবলই দূর্বিপাকে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল। অথচ সত্যিটা হলো,ফুটবল পাগল এই জাতি ফুটবলকে ভালোবেসে প্রাাণের বাজিতেও পিছপা হয়না।
এই বিশ্বকাপে অবশ্যই নতুন প্রত্যয় তৈরি হতে পারে, ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
আমরা আমাদের উজ্জীবিত ফুটবলকে আবারো দেখতে চাই! বিশ্বকাপ উন্মাদনা থাকবেই, বিশ্বকাপ বলে কথা! কিন্তু আমাদের ফুটবল কেনো ক্রমশ পিছিয়েই পড়বে,যখন পেছনের দেশগুলো অনেকই বেশি অগ্রগামী এখন।
ফুটবল উচ্ছাসে বিশ্ব রেকর্ড করেই নয়,ফুটবল খেলে জায়গা করে নিতে হবে বিশ্ব দরবারে, বিশ্ব আসরগুলোতে।নিদেনপক্ষে এশিয়ায়,দক্ষিণ এশিয়ায় যেনো প্রতিযোগীতার একটা শক্ত জায়গা করে নিতে পারে সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশের ফুটবলকে ঢেলে সাজাতে হবে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় নব আঙ্গিকে।বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য অনেক অনেক সাফল্যের দুয়ার খুলে যাক সচেতনতায়,সম্ভাবনায়ও। প্রত্যাশা ফুটবল প্রিয় মানুষের।