
লামিয়ার আব্বু সরকারি চাকরিজিবি, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের যাওয়া হয় পরিবারের সবার সাথে , এই বছর লামিয়ার বাবার অফিস
থেকে তাদের যাওয়ার জন্য কক্সবাজার যাওয়ার টিকিট দেওয়া হয়, পরিবারের সাথে আলোচনা না করে তার আব্বু টিকিট বুকিং করে ফেলে ।
একদিন সন্ধ্যায় লামিয়ার আব্বু অফিস করে বাসায় এসে তার আম্মু মিসেস রফিকের কাছে এক গ্লাস পানি চায় আর তাকে বলে
____ শুনো , একটা ভালো খবর আছে লামিয়া , অহনা আর আবির কে ডেকে আনো
_____ কি খবর??
____ আহা এতো তারাহুরা করছো কেন, আমি তো বলবো বলেই সবাইকে ডাকছে
_____ হুম, আচ্ছা আচ্ছা ডেকে আনছি
এই বলে তার আম্মু তাদের ডাকতে গেলো
_____ কিরে কোথায় সবাই, তোদের আব্বু তোদের ডাকছে
____হ্যাঁ আসছি ( অহনা)
এই বলে অহনা আর আবির দৌর দিয়ে তাদের মায়ের কাছে আসে
লামিয়ার আম্মু লামিয়া কে তাদের সাথে দেখতে না পেয়ে অহনা কে উদ্দেশ্যে করে বলে
____ লামিয়া কোথায়? ওকে দেখছি না তো
____ আপু তো স্টাডি রুম কি যানি করছে ( আবির)
____ আচ্ছা, তোমরা নিচে যাও তোমাদের আব্বু ডাকছে আমি দেখছি লামিয়া কি করছে
____ আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু ( অহনা)
এই বলে লামিয়ার আম্মু লামিয়া কে খুঁজতে স্টাডি রুমে চলে গেলো
লামিয়ার আম্মু স্টাডি রুমে এসে দেখতে পেলো লামিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে কি যেন পড়ছে
বেশ কয়েক বার লামিয়ার আম্মু লামিয়া কে ডাকলো কিন্তু লামিয়া পড়ায় এতো মনোযোগ ছিলো যে তার আম্মুর কথা শুনতে পেলো না
এর পর তার আম্মু তার কাঁধে হাত রাখতেই হঠাৎ করেই সে চমকে উঠে তার কেন জানি মনে হচ্ছিলো অন্য কেউ তার কাঁধে হাত রেখেছে ভয়ে ভয়ে পাশে
তাকাতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো
____ ওহ আম্মু তুমি, হঠাৎ এখানে
____ হুম তোমার আব্বু ডাকছে , সবাই কে কি যানি বলবে কিন্তু এই অসময় স্টাডি রুমে তুমি কি করছো ?
লামিয়া একটু ইতস্তত হয়ে তার আম্মুকে বলে উঠলো
_____তেমন কিছুনা, চলো দেখি আব্বু কি বলে
_____ হুম চলো
দুজনে নিচে নেমে আসলে তার আব্বু তাদের দেখে খানিকটা গম্ভীর মুখে বলে উঠে
_____এতক্ষণ লাগে আসতে ,
লামিয়া,মা শুনলাম তুমি নাকি এই অসময়ে স্টাডি রুমে
কি করছিলে ?
_____তেমন কিছু না আব্বু, বলো কেন সবাই কে এতো জরুরি ভিত্তিতে ডেকেছো
_____ ঠিক আছে শুনো সবাই , প্রতি বছর আমরা কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাই তো এবার অফিস থেকে আমাকে কক্সবাজার যাওয়ার টিকিট দেওয়া হয়েছে আর আমি সেটা বুকিং করে ফেলেছি তোমরা সবাই সবার মতো গোছানো শুরু করে দেও । কাল সকালে ফ্লাইট, ভোর বেলা সবাই রেডি হয়ে থেকো ।
এই শুনে অহনা আর আবির খুব খুশি হয়ে লাফাতে থাকে
____ কি মজা,কি মজা আমরা কক্সবাজার ঘুরতে যাচ্ছি
কিন্তু লামিয়া হু বলে সেখান থেকে উঠে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে বসে পরে আর কি যেন খুঁজতে থাকে কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পর তেমন কিছু না পেয়ে হতাশ হয়ে আবার স্টাডি রুমে চলে গেলো
স্টাডি রুমে গিয়ে কি যেন খুঁজতে থাকে সে হঠাৎ ডেক্সে থাকা একটা বইয়ের উপর লামিয়ার চোখ আটকে যায় আহা কি অদ্ভুত বইটা সে খুব রহস্য রহস্য
চোখে বইটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,
ঘড়িতে তখন রাত ৯ .৩০ বাঁজে টিকটিক শব্দে সারা ঘর একাকার করছে
লামিয়া খুব জোড়ে একটা নিশ্বাস ফেলে , বইটির দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবতে থাকে সে , খুলবে কি খুলবে না এই ভাবনা যেন তাকে গ্রাস করছে
রুমটা হঠাৎ করেই অন্ধকার হয়ে গেলো সারা ঘর তখন নিশ্চুপ, হঠাৎ করেই ক্যাচ ক্যাচ শব্দে দরজা টা খুলে গেলো একটা আলো ঘরে প্রবেশ করলো ,
লামিয়া খানিকটা ভয় পেলো হঠাৎ একটা চেনা শব্দে লামিয়ার একটু দম ফিরে পেলো
______ আপু , অ্যাই আপু
অন্ধকারে কি করো তুমি?( অহনা)
______ হুম , কি বললি ?
_____ বললাম অন্ধকারে কি করো
_____ কিছু না, কারেন্ট কখন গেছে ?
_____ এই একটু আগে , বের হয়ে আসো আম্মু খাইতে ডাকছে তো
_____ তুই যা আমি যাচ্ছি
_____ তারাতারি আসো
_____ হুম
লামিয়া নিচে যাওয়ার জন্য ওঠে দারালো অন্ধকারে কিছু দেখতে পাচ্ছিলো না জন্য নিজের ফোনটা খুজতে থাকলো হঠাৎ করেই কি যেন একটা বক্সের
সাথে ধাক্কা খেয়ে টেবিলের একটা কোণায় পড়ে গেলো হাত বাড়াতেই কিসের যেন আলো জ্বলে উঠলো এবার লামিয়া ঘাবড়ে গেলো
উহু না এটা তার ফোনের আলো হঠাৎ টাচ লেগে স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠেছে
আজব মনে সে ভাবতে থাকে
________ধুর কি যে করি না আমিও হয়েছি এক আস্ত ভিতুর ডিম এই ভয়ে আমি নাকি আবার রহস্য খুঁজছি
ধুর মানুষ শুনলে নিঘাত আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে হুম
এবার সে ফোনের আলো জ্বালিয়ে সোজাসুজি নিচে চলে যায়, এতো ভাবনার ভিরে সেই বই আর বক্স টার কথা সে বেমালুম ভুলে গেছে ।
তখন রাত ১০. ৩০ মিনিট ,,,,,,
তখন কারেন্ট চলে এসেছে
খাবার টেবিলে সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছে
সে চুপচাপ টেবিলে বসে প্রতিদিনের মতো প্লেটে খাবার নিয়ে খাচ্ছে ,
হঠাৎ সে কি যেন ভেবে তার বাবাকে প্রশ্ন করে বসে
_____ আচ্ছা আব্বু , এই স্টাডি রুমটা কবে করানো হয়েছে আর এই বই গুলো কবে কিনেছিলে??
_____ এই স্টাডি রুমটা তোমার দাদুর, বেশ কিছু বই তিনিই কিনেছিলেন তার খুব ইচ্ছে ছিলো মনের মতো করে এই স্টাডি রুমটা সাজাবে তিনি খুব অদ্ভুত ছিলেন যানো সবসময় মোটা ভারি ফ্রেমের চশমা পড়ে সারাক্ষণ স্টাডি রুমে বসে কি যেন খুঁজতেন , আর লিখতেন
তোমাদের দাদি জিঘাংসা করলে বলতেন ও তুমি বুঝবে না ।
______ দাদু কি খুঁজতেন আব্বু ( আবির)
_____ আমি জানি না তবে তার শেষ ইচ্ছে ছিলো এই স্টাডি রুমটা যেন আমি সবসময় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখি তাই তো আমি আরো অনেক ধরনের বই কিনে এনে সেখানে রেখেছি যদিও ব্যস্ততার কারণে আমার কখনো স্টাডি রুমে যাওয়া হয় না ।
লামিয়া খুব শান্ত ভাবে তার আব্বুর প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো সে তার আব্বুকে আর কিছুই বললো না , চুপচাপ খাবার খেয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো
চোখ বন্ধ করতেই হঠাৎ তার বইটার কথা মনে পরলো যেটা সে বেমালুম ভুলে গেছে
এতো রাতে কি তার আবার স্টাডি রুমে যাওয়া ঠিক হবে আর কি বা থাকতে পারে ওই বই টা তে থাক কাল দেখে নিবো এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যানি ঘুমিয়ে পড়েছে সে ।
হঠাৎ ছোট ভাই আবিরের চিল্লাচিল্লিতে লামিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায় ঘুম থেকে ওঠে দেখে আবির নতুন কাপড় পড়ে রেডি হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখছে আর লাফাচ্ছে
লামিয়ার হঠাৎ মনে পড়ে গেলো আজ তাদের কক্সবাজার যাওয়ার কথা সে বেমালুম ভুলে গেছে
ব্যাগ ও গুছায়নি সে এবার সত্যি আব্বুর বকা খাবে সে
তারাহুরা করে ফজরের নামাজ পড়ে ব্যাগে কিছু কাপড় গুছায় নিয়ে সরাসরি স্টাডি রুমে গিয়ে চলে যায় সেই অদ্ভুত বই আর কিছু বই ব্যাগে নিয়ে নিচে নেমে আসে
বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে চেপে কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎ লামিয়ার সেই রাতে বক্স টার কথা মনে পড়ে গেলো ।
সে তারাহুরা করে তার আব্বুকে বলে উঠলো
_____ আব্বু গাড়ি ঘুড়াও
_____ কিন্তু কেন? ( বিরক্ত ভাব নিয়ে)
_____ আমি কিছু একটা ফেলে এসেছি ওটা আমার খুব দরকার প্লিস আব্বু, বুঝার চেষ্টা করো
_____ লামিয়া আর ইউ ক্রেজি, হোয়াট আর ইউ টকিং,
উই আর অলরেডি লেইট এখন বাসা গেলে আমরা ফ্লাইট মিস করবো
_____ প্লিস বাবা
_____ ওকে ওকে বাট ওনলি ৫ মিনিট
_____ অলরাইট আব্বু
মিস্টার রফিক গাড়ি ঘোরালেন , বাসায় এসে লামিয়া আবার স্টাডি রুমে চলে গিয়ে বক্স টা খুঁজতে থাকলো
অহ কোথায় সেই বক্স ,বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পর সে সেটা আলমারির নিচে খুঁজে পেলো , সেটা নিয়ে সে তারাহুরা করে নিচে নেমে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো
লামিয়ার আব্বু আর কিছু না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে এয়ারপোর্টে চলে আসে একটুর জন্য তারা ফ্লাইট মিস করে নি ।
সবাই জায়গায় বসে ফ্লাইট ছাড়ার অপেক্ষা করতে থাকলো
আবির প্রচন্ড ভয় পাচ্ছিল সে খুব শক্ত তারে তাদের আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছিলো , তাদের আম্মু মিসেস রফিক আল্লাহ্ কে সরণ করতে থাকে
অহনা নিজের আর সবার সেলফি নিতে ব্যাস্ত এদিকে লামিয়া সেই অদ্ভুত বই আর বক্স টার কথা ভাবছে
কি আছে এই দুটোতে কোন রহস্য নাকি শুধুই একটা বই
এবার ফ্লাইট ছেড়ে দিলো বেশ কয়েক ঘন্টা পর তারা কক্সবাজার এয়ারপোর্টে এসে নামলো , তারা নামতেই কিছু লোক তার আব্বু কে স্যার স্যার বলে সম্বোধন করতে লাগলো ,লামিয়া মনে মনে ভাবতে লাগল
____ হয়তো অফিসের লোকজন
তারপর ইয়া বড় একটা গাড়িতে চেপে এক ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা আসলো
ভদ্রলোক লামিয়ার আব্বুর সাথে কোলাকুলি করে গাড়িতে ওঠার আহ্বান জানালেন
সবাই গাড়িতে চেপে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো
পাহাড়ি এলাকা খানিকটা আঁকাবাঁকা গাড়ি চলছে ধীর গতিতে আর সবাই সবার মতো খোশগল্প করছে, অহনা আবির প্রকৃতি দেখে খুব খুশি তারা নিজেদের মতো দুষ্টামি করছে আর লামিয়ার মন পড়ে আছে সেই বইটার উপর
গাড়ির স্লটে গান ভাসছে রবীন্দ্র সংগীত
” সখী, ভাবনা কাহারে বলে?
সখী, যাতনা কাহারে বলে?
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী
‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’
সখী, ভালোবাসা কারে কয়!
সে কি কেবলই যাতনাময়?
সে কি কেবলই চোখের জল?
সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে ”
এই আঁকাবাঁকা রাস্তার সাথে এই গান কেমন যেন বড্ড বেমানান, ভদ্রলোকের চয়েস নিয়ে এবার লামিয়ার সন্ধেয় হচ্ছে ,
লামিয়া গাড়ির কাঁচটা নেমে দিয়ে চোখ ঠান্ডা বাতাস অনুভব করতে থাকে কেমন যেন মন মাতানো একটা সুখ
তবে লামিয়ার এই সুখ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না
তারা রিসোর্টে পৌছে গেলো ,
একদম নিড়িবিলি মনে হচ্ছে একটা বিশাল জঙ্গলের ভেতর এক টুকরো পাহাড়
কেমন যেন গা ছমছম করা রহস্য জনক রিসোর্টা
এই রিসোর্ট দেখে অহনা আর আবির কান্না শুরু করে দিলো তারা এখানে থাকবে না তবে লামিয়ার ভালোই লাগছে রহস্য রহস্য ময় সব কিছু
অহনা আবিরের কান্না দেখে লামিয়ার আব্বু বার বার অন্য
রিসোর্ট খুঁজতে লাগলো কিন্তু খুঁজে পেলো না বাধ্য হয়ে এখানেই থাকতে হবে বলে তিনি লামিয়ার আম্মুকে জানালেন ।
রিসোর্ট ডুকে রুমের চাবি নিতে গেলে সেখানের একটা লোক বলে উঠলো
_____ এই নিন স্যার, আপনাদের রুমের চাবি, রুম নাম্বার ৮৮ , ৮৯ ।
এই বলে ব্যাগ গুলো সাথে নিয়ে যার যার রুমে রেখে এলো ,
লামিয়ার রুম নম্বর ৮৮
লামিয়ারা রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এক কাপ কফি বানিয়ে ব্যালকনি তে দাড়িয়ে সমুদ্র উপভোগ করতে থাকে
এক চুমুক দিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই চোখ দুটো আটকে যায় মনে হচ্ছিলো কিছু একটা তার দিকে তাকিয়ে ছিলো ।
কই কিছু নাই তো এখনে হয়তো মনের ভুল তারপর সে আপন মনে চা খেয়ে রুমে এসে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা করছে কোথাও যেতে
ইচ্ছে করছে না ,
অহনা, আবির তাদের আব্বু আম্মুর রুমে গিয়ে কার্টুন দেখছে ।
অনেক বার তাকে খাওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে কিন্তু সে যায় নি তাই তার আম্মু আব্বু সবাই খেয়ে রুমে শুয়ে পরেছে
রাত যতো গভীর হচ্ছে লামিয়ার ততো খিদে পেয়েছে
না হ এবার আর সহ্য করা যাচ্ছে না সত্যি লামিয়ার এবার প্রচন্ড খিদে পেয়েছে একটু আগেই তার আম্মু তাকে ফোন করে বলেছে তারা ঘুমাচ্ছে তাদের
যেন ডিস্টার্ব না করা হয়
এবার সে কি খাবে
সে ল্যান্ড লাইনে ০০৮৮ এ ফোন করলো রিং হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু ওপাশ থেকে কেউ ফোন তুলছিলো না
কি ব্যাপার সবাই ঘুমিয়ে গেছে নাকি বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর কে যেন ফোন ধরলো
লামিয়া কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে কে যেন আধভাঙ্গা গলায় বলে উঠলো
” হ্যালো রুম নাম্বার ৮৮ ”
লামিয়া এবার বলে উঠলো
_____ হ্যালো, হ্যালো জ্বি রুম নাম্বার ৮৮ থেকে বলছি
হ্যালো হ্যালো
______ এতো রাতে আমার কাছে কি দরকার তোমার?
______ জ্বি, দুঃক্ষিত এতো রাতে আপনাকে ডিস্টার্ব করে ফেললাম কিছু মনে করবেন না আসলে আমার প্রচন্ড খিদে পেয়েছে আপনাদের কাছে খাবার হবে ??
_____ খাবার তো সব শেষ
______ প্লিজ না করবেন না আমি খিদে সহ্য করতে পারি না দয়া করুন আমাকে একটু
______ আচ্ছা অপেক্ষা করুন আমি নিয়ে আসছি
______ জ্বি ধন্যবাদ, রুম নাম্বার মনে আছে তো হ্যালো
রুম নাম্বার কিন্তু ৮৮ হ্যালো হ্যালো
কথা শেষ না হতেই ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে দেয়
লামিয়া মনে মনে ভাবতে থাকে কি অদ্ভুত মানুষ বাবা
পুরোটাই না শুনে কেটে দিলো
কতক্ষণ যে লাগে কে যানে
প্রচন্ড গরম আজকে লামিয়া ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়, চারিদিকে কেমন যেন ছিমছাম নির্জন একটা স্থান সবাই কতো শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে যেদিন দু চোখ যায় সেদিকে শান্ত হয়ে আছে সব কিছু, সমুদ্র টাও বেশ শান্ত
হঠাৎ কিসের যেন একটা শব্দ লামিয়া ব্যালকনি থেকে রুমে এসে দেখে মাঝ বয়সী একটা মহিলা সাথে ৭ কি ৮ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে কি যেন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে
_____কে কে ওখানে ??
_____ আমরা
______ আমরা কে
______খাবার নিয়ে এসেছি
______ সে ঠিক আছে কিন্তু দরজা তো ভেতর থেকে বন্ধ তাহলে রুমে ঢুকলে কিভাবে
ছেলেটা খুব আস্তে করে বলে উঠলো আমরা ভুত তাই
লামিয়া মনে হয় কিছু শুনেনি তাই সে বলে উঠলো
_____ কি হলো বলো কিভাবে?
_____ মেমসাহেব ঘরের দরজা খোলা ছিলো , খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে খেয়ে নিন
এই বলে খাবার টেবিলে রেখে মহিলাটা ছেলেটার হাত ধরে দ্রুত বের হয়ে গেলো
লামিয়া আর কথা না বলে খাবার খেয়ে দরজা লাগাতে গেলো গিয়ে দেখলো রুমের দরজা আগে থেকেই ভেতর থেকে লাগানো তাহলে ওরা ভিতরে আসলো কিভাবে এসব ভাবতে ভাবতেই লামিয়ার গা টা ছমছম করে উঠলো তারপর দরজা খুলতেই হঠাৎ কিসের একটা শব্দে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গেলো
সকালে ঘুম থেকে উঠে সে বিছানায় নিজেকে আবিষ্কার করলো সব কিছু ঠিকঠাক ছিলো মনেই হচ্ছিল না কাল রাতে আদো কিছু হয়েছে তবে মাথার
পিছনে কেমন যেন অদ্ভুত পেইন হচ্ছে যাই হোক লামিয়া আর কিছু না ভেবে ফ্রেস হতে গেলো ফ্রেস হয়ে এসে হঠাৎ লক্ষ্য করলো তার ব্যাগ টা
এলোমেলো তবে সব কিছু ঠিকঠাক ছিলো নিচে গিয়ে সবার সাথে সকালের নাশতা খেতে গেলো
নাস্তা করতে গিয়ে সবাই সবার মতো খাবার অর্ডার করলো কিন্তু লামিয়া সেখানে চুপচাপ বসে কি যেন দেখছিলো ঠিক তখন সেখানকার ওয়েটার তাকে জিজ্ঞেস করলো
_____ ম্যাম আপনি কি খাবেন
লামিয়া তখন চোখ সরিয়ে ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
_____ হ্যাঁ, কালকে রাতের খাবার টা খুব মজার ছিলো ওইটা নিয়ে আসো
__
_____ সরি ম্যাম বুঝতে পারলাম না?
______ আরে কাল রাতে আমি অর্ডার করলাম আপনারা অর্ডার নিলেন
______ সরি ম্যাম, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমার জানা মনে আপনি রাতে স্যারের সাথে ডিনার করেন নি
_____ কিন্তু আমি তো রাতে খেয়েছি একটা আন্টি আর একটা পিচ্চি আমাকে রাতে খাবার দিয়ে গেছে তারপর দরজা লাগাতে গিয়ে দেখি দরজা ভেতর থেকে দেওয়া তারপর আর কিছুই মনে নেই উহ মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে কেন জানি
______ ম্যাম, আপনি মনে হয় স্বপ্ন দেখেছেন এরকম কেউ আমাদের এখানে কাজ করে না আর কারো ছোট বাচ্চা নেই সবাই এখানে ইয়াং
______ অদ্ভুত তো
______ তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে ( মিস্টার রফিক)
_______ নাহ্ আব্বু আমি ঠিক বলছি ( লামিয়া)
______ এমন কিছু হলে সত্যি ওরা বলতো ওরা তো আর যাই হোক মিথ্যে বলবে না তাই না ( মিস্টার রফিক)
লামিয়া আর কিছুই বলে না চুপচাপ এক কাপ কফি খেয়ে সুইমিং পুলের সামনে হাঁটতে থাকে তখন সে দূর থেকে লক্ষ্য করে সেই ছেলেটা যে তাকে খাবার দিয়েছিলো মায়ের সাথে সে লামিয়ার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে
লামিয়া ভয় পেয়ে যায়, হঠাৎ পিছন থেকে অহনা ডেকে উঠে আপু রুমে চলো আমার মাথা ঘুরছে, লামিয়া অহনা কে রুমে এনে শুয়ে দিলো আর সে ব্যাগ থেকে বই টা বের করলো আর সেই অদ্ভুত বই টা দেখতে লাগলো কেমন যেন রহস্য রহস্য লাগছে ।
হুম রহস্য বটে , দাদুর বই বলে কথা থাক এখন আর পড়তে ইচ্ছে করছে না একটু টিভি দেখি এই বলে লামিয়া টিভি তে খবর দেখাচ্ছিল হঠাৎ একটা নিউজে তার চোখ আটকে গেলো নিউজে দেখাচ্ছে সোমা নামে ৭ বছরের একটা বাচ্চা ও তার মা ছাদ থেকে পড়ে মারা তবে এই মৃত্যু কে অস্বাভাবিক মৃত্যু বলেছে পুলিশ
এই মেয়ে আর তার মাকে লামিয়ার খুব চেনা চেনা লাগছে কে ওরা কোথায় যেন দেখেছে
হুম মনে পড়েছে কাল দেখেছি কিন্তু কোথায়, কোথায় দেখতে পারি উহহহ মনে করতে পাচ্ছি না কেন এসব ভাবতে ভাবতেই মাথা কাজ করছে না
লামিয়ার সে টিভি বন্ধ করে তার দাদুর অদ্ভুত বই টা বের করলো
বইটার শুরুতেই প্রথম পেইজে ইয়া বড় করে লেখা ছিলো
সাল ১৯১০
” ঐশ্বর্য নিবাস ”
রোড নং ৮৮
হাউস নং ৮৮
কলকাতা ।
● অর্পিতা ঐশ্বর্য কামাল কাছনা রংপুর ।